পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী

সঙ্গে সে বলিল, উনি বাড়ি নেই一

 一 এলে পাঠিয়ে দিও 一 বলিয়া হারান চলিয়া গেল। স্বয়ং শীতলকে অথবা ভিজিটের টাকা, কি যে সে পাঠাইতে বলিয়া গেল, কিছুই বুঝিতে পারা গেল না।

 শীতলের ফিরিবার কথা ছিল রাত্রি আটটায়। সে আসিল পরদিন বেলা বারটায় সময়। বিষ্ণুপ্রিয়া কার কাছে খবর পাইয়া এবেলা শ্যামাকে ভাত পাঠাইয়া দিয়াছিল, শীতল যখন আসিয়া পৌঁছিল সে তখন অনেক ব্যঞ্জনের মধ্যে শুধু মাছ দিয়া ভাত খাইয়া উঠিয়াছে এবং নিজেকে তাহার মনে হইতেছে রোগমুক্তার মত।

 শীতল জিজ্ঞাসা করিল 一 খোকা কেমন?

 一 ভাল আছে।

 一 কাল গাড়ি ফেল করে বসলাম, এমন ভাবনা হচ্ছিল তোমাদের জন্যে!

 শ্যামার মুখে অনুযোগ নাই, সে গম্ভীর ও রহস্যময়ী। কাল বিপদে পড়িয়া কারো উপর নির্ভর করিবার জন্য সে মরিয়া যাইতেছিল, আজ বিপদ কাটিয়া যাওয়ার পর কিছু আত্মমর্যাদার প্রয়োজন হইয়াছে।


তিন

 কয়েক বৎসর কাটিয়াছে।

 শ্যামা এখন তিনটি সন্তানের জননী। বড় খোকার দুবছর বয়সের সময় তাহার একটি মেয়ে হইয়াছে, তার তিন বছর পরে আর একটি ছেলে। নামকরণ হইয়াছে তিনজনেরই 一 বিধানচন্দ্র, বকুলমালা ও বিমান বিহারী এগুলি পোষাকী নাম। এ ছাড়া তিনজনের তিনটি ডাকনামও আছে, খোকা — বুকু ও মণি।

 ওদের মধ্যে বকুলের স্বাস্থ্যই আশ্চর্য রকমে ভাল। জন্মিয়া অবধি একদিনের জন্য সে অসুখে ভোগে নাই, মোটা মোটা হাত-পা, ফোলা ফোলা গাল,一 দুৱন্তের একশেষ। শ্যামা তাহার মাথার চুলগুলি বাবরি করিয়া দিয়াছে। খাটো জাঙ্গিয়া পরা মেয়েটি যখন একমুহূর্ত স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া ঝাঁকড়া চুলের ফাঁক দিয়া মিটমিট করিয়া তাকায়, দেখিলে চোখ জুড়াইয়া যায়। বুকুর রঙও হইয়াছে বেশ মাজা। রৌদ্রোজ্জল প্রভাতে তাহার মুখখানা জ্বলজ্বল করে, ধূসর সন্ধ্যায় স্তিমিত হইয়া

৫৩