পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰতিবিম্বৰ করেছিল সামনের দেয়ালে টাঙ্গানো স্ট্যালিনের বড়ো বঁধানো ফটাে। যুদ্ধের বাজারে একক স্ট্যালিনের ফটাে বড় অসম্পূর্ণ মনে হল তারকের। ধীরে ধীরে পাক দিয়ে সে চারিদিকের দেয়ালে চাচিল-রুজভেল্ট চিয়াং-কাইশেকের ফটো তিনটিতে চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর চোখ পড়ল বড় সাহেবের দিকে। নিখুঁত ভঙ্গিতে মুখ থেকে পাইপ নামিয়ে একটু হেসে বড় সাহেব বললেন, “দেখলেন ? কেউ বাদ যান নি। বসুন।’ কি যে ভড়কে গেল তারক সেই হাসি দেখে আর গল্পে” মানুষের সহজ ভঙ্গির কথা শুনে । চাকরী আর না হবার উপায় নেই। চাকরীটি ইনি তাকে দেবেন। দেড় হাজার না দু’হাজার টাকা মাইনে পেয়ে অমন করে যিনি একশো টাকার চাকরীর উমেদারের দিকে চাইতে, . হাসতে ও কথা কইতে পারেন, তার কাছে তারকের নিস্তার নেই। দু’মিনিট কথা কয়ে দুটো সহজ প্রশ্ন করে আজকেই হয়তো এই শক্তিমান পুরুষ তাকে লটকে দেবেন। চাকরীতে । তারকের মাথাটা বেঁা করে ঘুরে যায়। স্ট্যালিনের ফটাে আর তার দৃষ্টির তেৱচ সমান্তরালকে দুই ছুই করে পাক খাচ্ছে ফ্যানের হাতলগুলি। চাকৰী করবে, পাটতে থাকবে, বৌকে আনবে, আত্মীয়কে খুন্সী করবে, এ যে চারতলা জীবন হবে তার।-রাজা, গোলাম, বিবি এবং টেকৃকার তাস দিয়ে গড়া জীবন ! বেমানান টাই ও সু্যট পরা সেই ভদ্রলোক স্পষ্টভাবে প্ৰত্যেক কথা উচ্চারণ করে করে বললেন, “বসতে বলছেন আপনাকে । বসুন।’ টেবিলের কোণের কাছে চেয়ার ছিল, তারক তা’তে কাত হয়ে হেলান দিয়ে বসল, ডান হাতটা তুলে দিল চেয়ারের পিছনে। চাকরীর জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসে এমনভাবে কেউ যে বসতে পারে, আবার সেই সঙ্গে মুখ নিচু করে রেখে হাসতে পারে মৃদু মৃদু, এ অভিজ্ঞতা যুদ্ধের চারজন অনুধ্যায়কের ছিল না। সাহেবের মুখে মৃদু বিস্ময় ও আমােদের ভাবু, দেখা গেল। তার বেপরোয়া ভাব স্মাটনেশের সামিল হয়ে তােৱই বিরুদ্ধে যাচ্ছে টের পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাত নামিয়ে তারক এইটু জড়সড় হয়ে বসল। মুখের হাসিটা সে কিছুতেই বশ করতে পারছিল না। চাকরী করা না করার যুদ্ধে হার মেনে মেনে এতদূর এগিয়ে জবাই হবার ঠিক আগে কি সহজ উপায় সে খুজে পেয়েছে জয়ী হয়ে পিছিয়ে যাবার। ভাবতেও তার হাসি উপচে উঠছে। এরা সিরিয়াস, খুলী। একটি ছেলের বেকারত্ব ঘোচানো গেল ভেবে এদের