পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী সরলতা, স্পষ্টতা ও বলিষ্ঠতা এরা এদের নৃত্য-নাট্যে সঞ্চারিত করেছেন। সব রকম বাহুল্য, জটিলতা ও আড়ম্বর বর্জন করা হয়েছে। সুর ও ধ্বনি সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে সাধারণ কয়েকটি যন্ত্র । পল্লী-চারণের গাথা, লোক-নৃত্য ও লোক-সঙ্গীতের ছন্দ সুর এবং ধ্বনি, ভঙ্গি আলোকপাত ও অপুর্ব অভিনয়-নৈপুণ্যের সমন্বয়ে “ভারতের মর্মবাণী হয়েছে | বুদ্ধিবিলাসী থেকে সাধারণ দর্শক, সকলের কাছেই এর ག་ན་ जभia বলিষ্ঠ। আত্মকলহের সুযোগে এদেশে ইংরাজের প্রতিষ্ঠালাভ, দারিদ্র্য, জমিদারের অত্যাচার, যন্ত্রযুগ, রেলপথ, কারখানা, বণিকের শোষণ, যুদ্ধ, নতুন দুর্দশা, জাতীয় নেতাদের কারাবাস, অনৈক্য, দুভিক্ষ, মহামারী, আমলাতন্ত্রের আশ্রয়পুষ্ট মজুতদার ও অতিলোভী ব্যবসায়ীর পোষণে নিস্পিষ্ট জনগণ, সমস্তই নৃত্য-নাট্যটিতে রূপ পেয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে আরম্ভ ও শেষ নয়। তাহলে “ভারতের মর্মবাণী’ অসম্পূর্ণ থেকে যেত। গোড়ায় পল্লীচারণের গাথায় অাছে ভারতের অতীত গৌরবের কাহিনী, সমাপ্তিতে জনগণের মুক্তিকামনা রূপ নিয়েছে জাগ্ৰত জনগণের সমবেত দাবীর কাছে দেশী ও বিদেশী অত্যাচারীর পরাজয়ে । নৃত্য-নাট্যটির পূর্বে বাংলা, গান্ধার, অন্ত্র, যুক্তপ্রদেশ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রদেশের নাচ ও গান পৃথকভাবে দেখানো হয়েছে ওঙ্কার আহবান, লম্বাদি নৃত্য, ধোবিনুত্য, নবান্ন উৎসব, রামলীলা ইত্যাদিতে। এর দ্বারা লোক-নৃত্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ পরিচয়হীন দর্শকের মনও প্রস্তুত হতে পেরেছে। এটা খুব বড় কথা ! লোককলার মারফতে নতুন চিন্তা ও বত মান যুগের সমস্যাগুলিকে সামনে ধরবার জন্যে লোক-কলার খাটি রূপের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, যাতে আমাদেরই অবহেলায় লুপ্তপ্রায় এই জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্পদের মূল্য সম্বন্ধে আমরা সচেতন হয়ে উঠতে পারি। ংস্কৃতির কোন বিশিষ্ট রূপ ও ধারাকে সংস্কারের মতে রূপান্তৱহীন করে রাখলে তার কোন ভবিষ্যৎ থাকে না, তার মৃত্যু অনিবাৰ্য। লোক-কলাকে বঁাচাবার ও লোক-শিক্ষার বাহন হিসাবে তাকে কাজে লাগাবার, উদ্দেশ্য তখনই সফল হতে পারে, যখন জনগণের জীবনের বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা স্থাপন করা যায়, তাদেরই জীবন্ত আনন্দ-বেদনা আশা-নিরাশা সঙ্কট ও সমস্ত রূপান্বিত হয়। গণ-নাট্যসজ্জা এটা উপলব্ধি করেছেন। তঁরা তাই (88