পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰাগৈতিহাসিক হাতিয়ায় ফেলিয়া আসিয়া পর পর তিনবার তিনটা দল করিয়া দূরে দূরে কত গ্রামে ডাকাতি করিয়া বেড়াইয়াছে তাহার সবগুলির নামও এখন তাহার স্মরণ নাই । তারপর এই সেদিন বৈকুণ্ঠ সাহার মেজ ভাইটার গলাটা সে দা’য়ের এক কোপে দু’ফাক করিয়া দিয়া আসিয়াছে। কি জীবন তাহার ছিল, এখন কি হইয়াছে। মানুষ খুন করিতে যাহার ভাল লাগিত, সে আজ ভিক্ষা না দিয়া চলিয়া গেলে পথচারীকে একটু টিটকারি দেওয়ার মধ্যে মনের জ্বালা নিঃশেষ করে। দেহের শক্তি তাহার এখনো তেমনি অক্ষুন্ন আছে। সে শক্তি প্ৰয়োগ করিবার উপায়টাই তাহার নাই । কত দোকানে গভীর রাত্রে সামনে টাকার থেকে সাজাইয়া একা বসিয়া দোকানী হিসাব মেলায়, বিদেশগত কত পুরুষের গৃহে মেয়েরা থাকে একা । এদিকে, ধারালো একটা অস্ত্ৰ হাতে ওদের সামনে হুমকি দিয়া পড়িয়া একদিনে বড়লোক হওয়ার পরিবৰ্ত্তে বিষ্ণুমাঝির চালাটার নীচে সে চুপচাপ শুইয়া থাকে। ডান হাতটাতে অন্ধকারে হাত বলাইয়া ভিখুৱ আপশোষের সীমা থাকে না । সংসারের অসংখ্য ভীরু ও দুৰ্ব্বল নরনারীর মধ্যে এতবড় বুকের পাটা। আর এমন একটা জোরালো শরীর নিয়া শুধু একটা হাতের অভাবে সে যে মরিয়া আছে । এমন কপালও মানুষের হয় ? তবু এ দুর্ভাগ্য সে সন্থা করিতে পারে। আপশোষেই নিবৃত্তি। এক ভিখুন আর থাকতে পারে না । বাজারে ঢুকিবার মুখেই একটি ভিখারিণী ভিক্ষা করিতে বসে। বয়স তাহার বেশী নয়, দেহের বাধুনিও বেশ আছে। কিন্তু একটা পায়ে হাঁটুর নীচে হইতে পায়ের পাতা পৰ্য্যন্ত তাহার থকথকে তৈলাক্ত ঘা । এই ঘায়ের জোরে সে ভিখুৱ চেয়ে বেশী রোজগার করে। সে জন্য ঘা’- টিকে সে বিশেষ যত্বে সারিতে দেয় না । ভিধুমধ্যে মধ্যে গিয়া তাহার কাছে বসে। বলে, ঘাট সারবো না, লয় ?” ভিখারিণী বলে “খুব ! অসুদ দিলে অখনি সারে।” ভিধু সাগ্রহে বলে, “সারা তবে, অসুদ দিয়া চটপট সারাইয়া লি। ঘাট সাৱলে তোর আর ভিকু মাগতি অইবো না,-জানািল ? আমি তোরে রাখুম।” - d