পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাগৈতিহাসিক ভিখু তখন আবার বলিল, “একটকু আওয়াজ লয়, ভাল চাস ত একদম চুপ মাইরা থাকৃ।” বসির নিস্পন্দ হইয়া গেলে ভিখু তাহার গলা হইতে হাত সরাইয়া নিল। দাম নিয়া বলিল, “আলোটা জাইলা দে, পাচী।” পাঁচী আলো জ্বলিলে ভিখু পরম তৃপ্তির সঙ্গে নিজের কীৰ্ত্তি চাহিয়া দেখিল। একটি মাত্ৰ হাতের সাহায্যে অমন যোয়ান মানুষটাকে ঘায়েল করিয়া গর্বের তাহার সীমা ছিল না। পাচীর দিকে তাকাইয়া সে বলিল,-“দেখছস ? কেন্ডা কারে খুন কবুল দেখছস ? তখন পাই পাই কইরা কইলাম ; মিয়াবাই ঘোড়া ডিঙ্গাইয়া ঘাস খাইবার লারবা গো, ছারান দেও। শুইনে মিয়াবায়ের অইল গোসা । কয়। কিনা, শির ছেচ্চ্য দিমু। দেন গো দেন, শিরটা আমার ছেচ্যাই দেন মিয়াবাই-” বসিরের মৃতদেহের সামনে ব্যঙ্গভরে মাথাটা একবারনত করিয়া ভিখু মাথা দুলাইয়া হা হা করিয়া হাসিতে লাগিল । সহসা ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, “ঠ্যারাইন বোবা ক্যান গো ? আরে কথা ক’ হাড়হাব্বাইত মাইয়া ! তোরে দিমু নাকি সাবার কইরা,-আঁ্যা ?” পাচী কঁাপিতে কঁাপিতে বলিল,-“ইবারে কি করবি ?? “দ্যাখ কি করি । পয়সা করি ক’নে গুইন রাখছে, আগে তাই ক।” বসিরের গোপন সঞ্চায়ের স্থানটি পাঁচী অনেক কষ্টে আবিষ্কার করিয়াছিল। ভিখুৱ কাছে প্ৰথমে সে অজ্ঞতার ভান করিল। কিন্তু ভিখু আসিয়া চুলের মুটি চাপিয়া ধরিলে প্ৰকাশ করিতে পথ পাইল না । বসিরের সমস্ত জীবনের সঞ্চয় কম নয়, টাকায় আধুলিতে একশত টাকার উপর। একটা মানুষকে হত্যা করিয়া ভিখু পূর্বে ইহার চেয়ে বেশী উপার্জন করিয়াছে। তবু সে খুলী হইল। বলিল “কি কি শিবি পুটলি বাইধা ফ্যাল পাঁচী। তারপর ল’। ৱাইত থাকতে মেলা করি । খানিক বাদে নওমির চাদ উঠবো, আলোয় আলোয় পথটুকু পার হিমু।” পাঁচী পুটুলি বাধিয়া লইল। তারপর ভিখুৱ হাত ধরিয়া খোড়াইতে খোড়াইতে ঘরের বাহির হইয়া রাস্তায় গিয়া উঠিল । পুৰ্ব্বাকাশের দিকে চাহিয়া ভিখু বলিল “অখনই চান্দ উটিবো পাচী ।” পাচী বলিল, “আমরা যামুকনে ?” ‘সদর। ঘাটে না’ চুরি করুম। বিয়ানে ছিপতিপুরের সামনে জংলার মন্তি (VC)