পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শৈলজ শিলা ইঙ্গিতে বলি, “বেঁচে থাকতে হলে সবই চাই, শিলা ।” সে বলে, “মরাটাও তো কঠিন নয় দাদু!” তা বটে। বলি, ‘তবু যার অন্যথা নেই তাকে মানতে হয়।” সে বলে, “জানি। কিন্তু মানার পথটা আমি তোমার কাছে শিখব না। দাদু। দরজায় দাড়িয়ে থাকলে আমি কি করে বাইরে যাই বলে তো ? দিনের ব্যাপারটা এখন এই রকম দাড়াইয়াছে। রাত্রির ব্যাপারটা অন্যরূপ। বাহিরে কোনোদিন জ্যোৎস্ব থাকে, কোনোদিন থাকে না, কোনোদিন বৃষ্টি পড়ে, কোনোদিন পড়ে না। দুই হাতে বুক চাপিয়া বিছানায় উপুড় হইয়া পড়িয়া থাকি । ঘুম আসে না, আসিবে না জানি, সেজন্য ভাবিও না। কিন্তু ঘরের বাতাস যেন নিশ্বাসের পক্ষে অপ্রচুর হইয়া পড়ে। উপরে কঁাটা নিচে কঁাটা দিয়া কে যেন আমাকে জীবন্ত কবর দিয়াছে মনে হয়। তারপর এক সময় পা টিপিয়া টিপিয়া গিয়া শিলার দরজা ঠেলিয়া বলি, “তোর আজকাল ভয় করে না কেন, শিলা ?” “চব্বিশ ঘণ্টাই তো ভয় করে দাদু।” “তবে দরজা খোল । ভয় মিটিয়ে নে ৷” শিলা কঠিনস্বরে বলে, ‘ঘুমোও গে যাও, দাদু। এমন যদি করে, যেদিকে দু-চোখ যায় চলে যাব।” নিজের ঘরে ফিরিয়া গিয়া দুই হাতে বুক চাপিয়া শুইয়া পড়ি। শৈলে যার জন্ম শিলা যার নাম সে শিলার মতো শক্ত হইবে জানি, কিন্তু চিরকাল রসে ডুবাইয়া রাখিলেও শিলা কেন গলিবে না ভাবিয়া মাথা গরম হইয় ওঠে। 6 ፃ ፃ vo