পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হারাণের নাতজামাই “Cሻfቔ উঠি উঠি করেও দেরি হয়। তারপর আজ সন্ধ্যারাতেই পুলিশ হানার সেইরকম সোর ওঠে কাল মাঝরাত্রির মতো । সদলবলে মন্মথ আবার আচমকা হানা দিয়েছে। আজ তার সঙ্গের শক্তি কালের চেয়ে অনেক বেশী । তার চোখ সাদা । সোজাসুজি প্রথমেই হারাণের বাড়ি । “কি গো মণ্ডলের শাশুড়ি,” মন্মথ বলে ময়নার মাকে, ‘জামাই কোথা ?” ময়নার মা চুপ করে দাড়িয়ে থাকে। “এটা আবার কে ?” “জামাই।” ময়নার মা বলে । “বাঃ, তোর তো মাগী ভাগ্যি ভাল, রোজ নতুন নতুন জামাই জোটে। আর তুই ছুড়ি এই বয়সে-” হাতটা বাড়িয়েছিল মন্মথ রসিকতার সঙ্গে ময়নার থুতনী ধরে আদর করে একটু নেড়ে দিতে । তাকে পৰ্যন্ত চমকে দিয়ে জগমোহন লাফিয়ে এসে ময়নাকে আড়াল করে গর্জে ওঠে, “মুখ সামলাইয়া কথা কইবেন ।” বাড়ির সকলকে, বুড়ো হারাণকে পর্যন্ত, গ্রেপ্তার করে আসামী নিয়ে রওনা দেবার সময় মন্মথ দেখতে পায় কালকের মতো না হলেও লোক মন্দ জামেনি। দলে দলে লোক ছুটে আসছে চারিদিক থেকে, জমায়েত মিনিটে মিনিটে বড় হচ্ছে । মথুৱার ঘর পার হয়ে পান পুকুরটা পর্যন্ত গিয়ে আর এগোনো যায় না। কালের চেয়ে সাত আট গুণ বেশী লোক পথ আটকায়। রাত বেশী হয়নি, শুধু এগায়ের নয়, আশেপাশের গায়ের লোক ছুটে এসেছে। এটা ভাবতে পারে নি মন্মথ । মণ্ডলের জন্য হলে মানে বুঝা যেত, হারাণের বাড়ির লোকের জন্য চারিদিকের গ ভেঙে মানুষ এসেছে। মানুষের সমুদ্রের, ঝড়ের উত্তাল সমুদ্রের সঙ্গে লড়া যায় না। ময়না তাড়াতাড়ি আঁচল দিয়েই রক্ত মুছিয়ে দিতে আরম্ভ করে জগমোহনের। নব্বই বছরের বুড়ো হারাণ সেইখানে মাটিতে মেয়ের কোলে এলিয়ে নাতিৱ জন্য উতলা হয়ে কঁপা গলায় বলে, “ছোড়া গেল কই । কই গেল ? হায় ভগবান ।” (7S