পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছোট বকুলপুরের যাত্রী চায় দিবাকরেরা কোথায় যাবে। “ছোটবকুলপুৱা।” শুনে তারা দুজনেই ঘাড় নাড়ে। ‘ওরে বাবা, রাত্ৰিবেলা ছােটবকুলপুর কে যাবে। সেখানে সৈন্যপুলিশ গ্রাম ঘিরে আছে, রীতিমতো লড়াই চলছে।” চারজনেই তারা সম্মুখে পথটার দিকে তাকায়। ছোটবকুলপুরের এ রাস্তা কিছুদূর গিয়ে বঁাক নিয়েছে, কিন্তু সে পৰ্যন্ত এখন নজর চলে না-মনে হয় বিপজ্জনক অন্ধকারেই বুঝি পথটা হারিয়ে গেছে। বঁ হাতে কোলের বাচ্চাকে সামলে ডান হাতে আল্লা দিবাকরকে এক পা পিছু ঠেলে দেয়, নিজে এগিয়ে দায়িত্ব নেয়। “ওখান তক্‌ নাই বা গেলে বাবা ? যাদৱ যেতে চাও নিয়ে চলো, বাকি রান্ত মােরা হেঁটে যাব। ভাড়া ঠিকমতো পাবে।” রাম বলে, “রাতের বেলা কে অত হাঙ্গামা করে, না কি বল ঘোষের পো ?” ‘ওমা, তোমরা পুরুষ হয়ে ডরাচ্ছ !” আন্না মিষ্টি সুরে বলে, “বাচ্চ কোলে যেয়েছেলে যাব, তোমরা পুরুষ হয়ে ডরাচ্ছি।” রাম চুপ করে থাকে। তার বয়স বেশী, সাহস কম। গগন ঘোষ বলে, “কমলতলা তক যেতে পারি।” তাই হোক। কমলতলার সীমা পেরিয়েও যদি নামিয়ে দেয়। তবু প্ৰায় আধমাইল হাটতে হবে । পুরো দেড়ক্রোশ হঁাটার চেয়ে সে অনেক ভাল। একটা গাড়িতে বলদ জুড়লে আন্না উঠে বসে, এ কসরত তার অভ্যাস আছে। গগনের গাড়িটা নড়বড়ে, ক্ৰমাগত লেজ মলে তাড়া না দিলে শীর্ণ বুড়ো বলদ এক পা এগোতে চায় না। আল্লা আগ্রহের সঙ্গে ছোটবকুলপুরের খবর জিজ্ঞাসা করে, তবে গায়ে ঘরে পৌছবার আগে বাপ-ভায়ের কুশল জানার আশা সে করে না। গ্রামের সাধারণ অবস্থার ঘনিষ্ঠতর বিবরণ, অনেক নতুন খবর গগনের কাছে জানা যায়। দূর থেকে তারা শুনেছিল যে ছোটবকুলপুরের অবস্থা অতি শোচনীয়, প্ৰচণ্ড আঘাতে গায়ের গোরস্থ জীবন তছনছ চুরমার হয়ে গেছে। গগনের কাছে শোনা যায়, ব্যাপার ঠিক তা নয়। গোড়ায় গায়ের মধ্যে খুব খানিকটা অত্যাচার হয়েছিল, কিন্তু তারপর গায়ের লোক এমন আঁটসঁটি বেঁধে তৈরী হয়ে জেকে বসেছে যে চৌধুৰী বা ঘোষেদের কোন লোক অন্তত দু ডজন ব্রাইফেল ছাড়া গাঁয়ের ভেতরে ঢুকড়েই সাহস পায় না। একবার মুখ খুললে গগনকে খামানো দায়। গরুর লেজ (Se