পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী কাসতে বেদম হয়ে পড়ে । আল্লা বলে, ‘গায়ের চাষা পাড়ার দশটা লোক ডেকে পাঠাও না বাবুৱা, মোকে দু-চারজন চিনবেই, গায়ের মেয়া আমি।” “সে তো চিনবে, না চিনলেও চিনবে । যাদের সঙ্গে যোগসাজস। তঁদের যদি না চিনবে তো কদের চিনবে ?? আন্না দিবাকরের কানে কানে বলে, “গায়ের লোক ডাকতে ডৱাচ্ছে, জানো ? দীর্ঘ থলথলে লোকটি আঙুল উচিয়ে বলে, “এই ? কানে কানে কী কথা হচ্ছে ? চুপি চুপি সলাপরামর্শ চলবে না, খপর্দার।” ‘গায়ে যাওয়া কি বারণ বাবু ? একশো চুয়াল্লিশ বুটিয়েছে ?? দিবাকর প্রশ্ন করে। কদমছাটা চুল লম্বাটে মাথা পাঞ্জাবি গায়ে বয়াটে চেহারার ছোড়াটা বলে, “বারণ কেন, বারণ নেই। তোমরা কে, কি মতলবে এসেছ জানা গেলেই যেতে দেওয়া হবে ।” “ওসব যাতে জানা যায় তার একটা বিহিত কর বাবুৱা ?” “চোপ, তামাশা হচ্ছে, না ? ধমকানির চোটে দিবাকরেরা চুপ হয়ে যায়, বাচ্চাটা ককিয়ে কেন্দে উঠে প্ৰতিবাদ জানায় । ওদের দিকে পিছন ফিরে বসে ছেলেকে শান্ত করতে করতে আন্না তাদের মন্তব্য ও পরামর্শ শোনে। আচমকা গরুর গাড়ি চেপে হাজির হয়ে তারা যে গুরুতর ও জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তা নিয়ে মানুষগুলি রীতিমতো বিব্রত ও বেশ খানিকটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। সঙ্গের জিনিস, বেশভুষা, চেহারা দেখে আর কথাবার্তা শুনে সত্যি সত্যি টের পাবার জো নেই যে এরা সত্যিকারের নিরীহ সাধারণ, গোবেচারী চাষামজুর, মাগভাতার ছাড়া অন্য কিছু নয়, কিন্তু সেটাই হয়ে দাড়িয়েছে দারুণ সন্দেহের কারণ। যে তাণ্ডব চলেছে ছোটবকুলপুরে কদিন ধরে, তাতে সত্যিকারের কোন ভীরু মুখ্য ছোটলোক মাগিছেলে সাথে নিয়ে সাধ করে কখনো তার মধ্যে আসতে চায় ? তাও আবার হাঙ্গামার খবর জানিবার পরে { বাজে লোকের এ সাহস হবে কোথেকে ? তার চেয়েও বড় কথা, সন্দেহের কথা, চারিদিকে এত রাইফেল বন্দুকের সমারোহ দেখেও ওরা মোটে ভড়কে যায়নি, দিব্যি নিৰ্ভয় নিশ্চিন্তু ভাব । একজন নীচু গলায় বলে, “নিশ্চয় কোন ডেঞ্জারাস লোক ছদ্মবেশে এসেছে।’ R GRN9W)