পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী

 — নিশ্চয় আরও বেশি, মিথ্যে বলছ বাবু তুমি, নিজে নিজে খরচ কর তো সব? আমার এদিকে খরচ চলে না, ছেঁড়া কাপড় পরে আমি দিন কাটাই।

 — আরে মুস্কিল, তাই তো কাপড় কিনে আনলাম। আচ্ছা তো নেমকহারাম তুমি।

 শ্যামা রঙীন কাপড়খানা নাড়াচাড়া করে, মিষ্টি করিয়া বলে, কি টানাটানি চলেছে বোঝ না তো কিছু, কি কষ্টে যে মাস চালাই ভাবনায় রাতে ঘুম হয় না — দু-চারটে টাকা যদি পাও, কেন নষ্ট করা? এনে দিলে সুসার হয়। তোমার খরচ কি? বাজে খরচ করে নষ্ট কর বইতো নয়, যা স্বভাব তোমার জানি তো! হাতে টাকা এলে আঙুলের ফাঁক দিয়ে গলে যায়। এবার থেকে আমায় এনে দিও, তোমার যা দরকার হবে চেয়ে নিও, আর কটা মাস মোটে, ধারটা শোধ হয়ে গেলে তখন কি আর টানাটানি থাকবে, না তুমি দশ বিশ টাকা বাজে খরচ করলে এসে যাবে?

 শ্যামা বলে, শীতল শোনে। শ্যামাকে বোধ হয় সে আর একজনের সঙ্গে মিলাইয়া দেখে, যে এমনি মিষ্টি মিষ্টি কথা বলিয়া বুঝাইয়া টাকা আদায় করিত, বলিত, আমার দুখানা গয়না গড়িয়ে দে, টাকাটা তাহলে আটকা থাকবে, নইলে তুই তো সব খরচ করে ফেলবি?— দরকারের সময় তুই তোর গয়না বেচে নিস, আমি যদি একটি কথা কই —

 সে এসব বলিত মদের মুখে। শ্যামা কি?

 তারপর শ্যামা বলে — এ কাপড় তো পরতে পারব না আমি ছেলের সামনে — ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে, আমার লজ্জা করবে বাবু।

 — না পার, ওই নর্দমা রয়েছে, ওখানে ফেলে দাও। — শীতল বলে।

 রাত্রে ছেলেমেয়েরা সব ঘুমাইয়া পড়িলে শ্যামা আস্তে আস্তে শীতলকে ডাকে, বলে— হ্যাঁগা ঘুমুলে নাকি? ফুটফুটে জ্যোছনা উঠেছে দিব্যি, ছাতে যাবে একবারটি?

 শীতল বলে — আবার ছাতে কি জন্যে?— কিন্তু সে বিছানা ছাড়িয়া উঠে।

 শ্যামা বলে, গিয়ে একটা বিড়ি ধরাও, আমি আসছি।

 রঙীন কাপড়খানা পরিয়া শ্যামা ছাদে যায়। বড় লজ্জা করে শ্যামার — শীতলকে নয়, বিধানকে। ঘুম ভাঙিয়া রাত দুপুরে তার পরনে রঙীন কাপড় দেখিলে, ও যা ছেলে, ওর কি আর বুঝিতে বাকি থাকিবে, শীতলের মন ভুলানোর জন্যে সে সাজগোজ

৭৩