পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাণিক গ্রন্থাবলী

দেশলাই ধরাইয়া দেয়, আর অনর্গল কথা বলে। শীতল বাড়ি না থাকিলে ছাদে গিয়া তাহার গোসাঘরে পুতুল খেলে, মিস্ত্রিদের কাজ দেখে, আর শ্যামার ফরমাস খাটে। শীতল না থাকিলে মেয়েটার মুখের কথা যেন ফুরাইয়া যায়।

 একদিন শ্যামা নূতন গুড়ের পায়স করিয়াছে, সকলে পরিতোষ করিয়া খাইল, বকুল কিছুতে খাইবে না, কেবলি বলিতে লাগিল — দাঁড়াও, বাবা আসুক, বাবাকে দাও?

 শ্যামা বলিল — সে তো আসবে রাত্তিরে, ওই দ্যাখ বড় জামবাটিতে তার জন্যে তুলে রেখেছি, এসে খাবে। তোরটা তুই খা!

 বকুল বলিল — বাবা পায়েস খেতে আসবে দুটোর সময়।

 শ্যামা বলিল — কি করে জানলি তুই আসবে?

 বকুল বলিল — আমি বললাম যে আসতে? বাবা বললে দুটোর সময় ঠিক আসবে,— আমি বাবার সঙ্গে খাব।

 শ্যামা বলিল — দেখলে মামা মেয়ের আব্দার? বুড়ো ঢেঁকি মেয়ে, বাবাকে পায়েস খাবার নেমন্তন্ন করেছেন, আপিস থেকে তিনি পায়েস খেতে বাড়ি আসবেন।...খা বুকু, খেয়ে বাটি খালি করে দে। তিনি যখন আসবেন খাবেন এখন, তুই বরং আদর করে খাইয়ে দিস, এখন নিজে খেয়ে আমায় রেহাই দে তো।

 বকুল কিছুতে খাইবে না, শ্যামারও জিদ চাপিয়া গেল, সে-ও খাওয়াবেই। পিঠে জোরে দুটো চড় মারিয়া কোনো ফল হইল না, বকুল একটু কাঁদিল না পর্যন্ত। আরো জোরে মারিলে কি হইত বলা যায় না, কিন্তু যতই হোক শ্যামার তো মায়ের মন, কতবার কত জোরে আর মায়ের মন লইয়া মেয়েকে মারা যায়? এক খাবলা পায়স তুলিয়া শ্যামা মেয়ের মুখে গুঁজিয়া দিতে গেল, বকুল দাঁত কামড়াইয়া রহিল, তার মুখ শুধু মাখা হইয়া গেল পায়সে।

 হার মানিয়া শ্যামা অভিমানাহত কণ্ঠে বলিল — উঃ, কি জিদ মেয়ের! কিছুতে পারলাম না খাওয়াতে?

 দুটোর আগে শীতল সত্য সত্যই ফিরিয়া আসিল। শ্যামা আসন পাতিয়া গেলাসে জল ভরিয়া দিল। ভাবিল, শীতল খাইতে বসিলে সবিস্তারে বকুলের জিদের গল্প করিবে। কিন্তু ঘরের মধ্যে বাপ-বেটিতে কি পরামর্শই যে দুজনে তাহারা করিল, খানিক পরে মেয়ের হাত ধরিয়া শীতল বাড়ির বাহির হইয়া গেল। যাওয়ার

৮৮