রানীকে দিয়া পরিচয় পাঠাইয়া শ্যামার সঙ্গে দরকারি কয়েকটা কথা বলার ইচ্ছা জানাইলেন। তারপর নিজেই হাঁকিয়া শ্যামাকে শুনাইয়া বলিলেন, তিনি বুড়ো মানুষ, শীতলকে ছেলের মতন মনে করিতেন, তার সঙ্গে কথা কহিতে শ্যামার কোনো লজ্জা নাই। লজ্জা শ্যামা এমনই করিত না, ঘোমটা টানিয়া সে বাহিরের ঘরে গেল। রানী সঙ্গে গিয়াছিল, কমলবাবু বলিলেন — তোমার ঝিকে যেতে বল মা।
রানী চলিয়া গেলে বলিলেন — শীতল ক’দিন বাড়ি আসে নি মা?
শ্যামা বলিল — বুধবার আপিসে গেলেন, তারপর আর ফেরেন নি।
ওইদিন একটার সময় শীতল যে বাড়ি ফিরিয়া তাহাকে টাকা দিয়া গিয়াছিল, শ্যামা সে কথা গোপন করিল।
একবারও আসে নি, দু-এক ঘণ্টার জন্যও?
— না।
— তোমায় টাকাকড়ি কিছু দিয়ে যায় নি?
— না।
কমলবাবুর গলাটি বড় মিষ্টি, ঘোমটার ভিতর হইতে আড়চোখে চাহিয়া শ্যামা দেখিল মুখের ভাবও তাঁহার শান্ত, নিস্পৃহ। শ্যামা সাহস পাইয়া বলিল — কোনো খবর না পেয়ে আমরা বড় ভাবনায় পড়েছি, আপনি যদি কিছু জানেন—
কমলবাবু বলিলেন — না বাছা, আমরা কিছুই জানি নে। জানলে তোমায় শুধোতে আসব কেন?
মনে হয় আর কিছু বুঝি তাহার বলিবার নাই, এইবার বিদায় হইবেন, কিন্তু কমলবাবু লোক বড় পাকা, কলিকাতায় ব্যবসা করিয়া খান। কথা না বলিয়া খানিকক্ষণ শ্যামাকে তিনি দেখেন। মনে যাদের পাপ থাকে এমনিভাবে দেখিলে তারা বড় অস্বস্তিবোধ করে, কাবু হইয়া আসে। তারপর তিনি একটা নিশ্বাস ফেলিয়া অকস্মাৎ ভগবানের নামোচ্চারণ করেন, বলেন — এটি শীতলের ছেলে বুঝি? বেশ ছেলেটি, কি বল বীরেন?— এস তো বাবা আমার কাছে, এসো।— নাম বলতো বাবা? বল ভয় কি?— মণি? সোনামণি তুমি, না?— মণিকে এই সব বলেন আর আড়চোখে কমলবাবু শ্যামার দিকে তাকান। শ্যামা কাবু হইয়া আসে। ভাবে, হাজার টাকার কথাটা স্বীকার করিয়া কমল-