পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাণিক গ্রন্থাবলী

পরিবে না, বাড়ি শীতলের নামে। শুনিয়া মামা একেবারে হতাশ হইয়া বলে যে তা হলেই সর্বনাশ, টাকাগুলি খরচ করিয়া শীতল ফিরিয়া আসিয়াই বাড়িটা বিক্রয় করিয়া নিশ্চয় কমলবাবুর টাকাটা দিয়া বাঁচিবার চেষ্টা করিবে। শ্যামার মুখ শুকাইয়া যায়, সে কাঁদিতে থাকে।

 পরামর্শ করিয়া কিছুই ঠিক করিতে পারা যায় না, বেশির ভাগ আরো বেশি বেশি বিপদের সম্ভাবনাগুলি আবিষ্কৃত হইতে থাকে।

 শেষে মামা এক সময় বলে — শ্যামা, সর্বনাশ করেছিস!— আপিসের টাকা থেকে শীতল তোকে দিয়ে যায় নি হাজার টাকা?

 শ্যামা বলে — একথা জিজ্ঞেস করছ কেন মামা?

 মামা বলে — কেন করছি তুই তার কি বুঝবি, পুলিসে বাড়ি সার্চ করবে না? নোট-টোট যদি দিয়ে গিয়ে থাকে তা বেরিয়ে পড়বে না? তোকে ধরে যে টানাটানি করবে রে?

 শুনিয়া শ্যামার মুখ পাংশু হইয়া যায় — বলে, কি হবে মামা তবে?

 এবার মামা সুপরামর্শ দেয়, বলে — দে দে, আমায় এনে দে টাকাগুলো, দেখ দিকি কি সর্বনাশ করেছিলি? ওরে নোটের যে নম্বর থাকে, দেখা মাত্র ধরা পড়বে ও টাকা কমলবাবুর! ছি ছি, তোর একেবারে বুদ্ধি নেই শ্যামা, দে নোটগুলো আমি নিয়ে যাই, কলকাতায় মেসে হোটেলে ক’দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকিগে। আস্তে আস্তে পারি তো নোটগুলো বদলে ফেলব, নযতো দু-এক বছর এখন লুকানো থাক, পরে একটি দুটি করে বার করলেই হবে।

 সেই রাত্রেই নোটের তাড়া লইয়া মামা চলিয়া গেল। শ্যামা বলিল — মাঝে তুমি এলে কি ক্ষতি হবে মামা, পুলিস তোমায় সন্দেহ করবে?

 মামা বলিল — আমায় কেন সন্দেহ করবে? আসব শ্যামা, মাঝে মাঝে আমি আসব।

 রাত্রি প্রভাত হইল, শ্যামার ঘরের ছাদ পিটানোর শব্দে দিনটা মুখর হইয়া রহিল, দুদিন দুরাত্রি গেল পার হইয়া, না আসিল পুলিস, না আসিল মামা, না আসিল শীতল। শ্যামার চোখে জল পুরিয়া আসিতে লাগিল। কতকাল আগে তাহার বার দিনের ছেলেটি মরিয়া গিয়াছিল, তারপর আর তো কোনোদিন সে ভয়ঙ্কর দুঃখ পায় নাই, ছোটখাট দুঃখ-দুর্দশা যা আসিয়াছে স্মৃতিতে এতটুকু দাগ পর্যন্ত রাখিয়া যায়

৯৬