পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী

যাওয়ার সময় ছোট বোনটির কথা দাদার কি একবারও মনে পড়িল না? যাই হোক, সামনের রবিবার রাখাল কলিকাতা আসিতেছে, দাদাকে খোঁজ করার যা যা ব্যবস্থা দরকার সে-ই করিবে, শ্যামার কোনো চিন্তা নাই। টাকার কথা মন্দা কিছু লেখে নাই।



রবিবার সকালে রাখাল ভারি ব্যস্ত সমস্ত অবস্থায় আসিয়া পড়িল, যেন শীতলের পালানোর পর প্রায় একমাস কাটিয়া যায় নাই যা কিছু ব্যবস্থা সে করিতে আসিয়াছে, এক ঘণ্টার মধ্যে সে সব না করলেই নয়। বাড়িতে পা দিয়াই বলিল — কি বৃত্তান্ত সব বল তো বৌঠান।

 শ্যামা বলিল — বসুন, জিরোন, সব বলছি।

 — জিরোব?— জিরোবার কি সময় আছে!

 মন্দার কাছে চিঠিতে শ্যামা শীতলের তহবিল তছরুপের বিষয়ে কিছু লেখে নাই, রাখালকে বলিতে হইল। রাখাল বলিল — শীতলবাবু এমন কাজ করবেন, এ যে বিশ্বাস হতে চায় না বৌঠান। রাগ করে চলে যাওয়া, — হ্যাঁ সেটা সম্ভব, মানুষটা রাগী, কিন্তু一

 অনেক কথাই হইল, অনেক অর্থহীন, কতক অবাস্তর, কতক নিছক ব্যক্তিগত সমালোচনা ও মন্তব্য। আসল কথাটা আর ওঠেই না। শ্যামা রাখালের কথা তুলিবার অপেক্ষা করে, রাখাল ভাবে শ্যামাই কথাটা পাড়ুক; সারাটা সকাল তাহারা ঝোপের এদিক ওদিক লাঠি পিটাইল, ঝোপ হইতে বাঘ বাহির হইবে না পেখম তোলা ময়ূর বাহির হইবে, সকাল বেলা সেটা আর ঠাহর করা গেল না। বাড়িতে অতিথি আসিয়াছে, শ্যামা রাঁধিতে গেল। রাখাল গল্প জুড়িল মামার সঙ্গে। শ্যামা ভাবিল, কি আশ্চর্য পরিবর্তন আসে মানুষের জীবনে? খোলা মাঠে কি ভাবে হিংস্ৰ শ্বাপদ-ভরা জঙ্গল গড়িয়া ওঠে কয়েকটা বছরে? মুখোমুখি বসিয়া আজ রাখালের মন ও তাহার মনের মুখদেখাদেখি নাই; দুজনের খোলা মনে যে জঙ্গল গিজগিজ করিতেছে, তারি মধ্যে দুজনে লুকোচুরি খেলিতেছে। না, ঠিক এভাবে শ্যামা ভাবে নাই? সে সোজাসুজি সাধারণ ভাবেই ভাবিল যে রাখাল কি স্বার্থপর হইয়া উঠিয়াছে!

৯৯