পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So O খোকাকে শোয়াইয়া দিয়া আসিয়া সুমতি দেখিল এবার স্বয়ং নন্দ অন্তৰ্হিত হইয়াছে। “নন্দ লোক ডাকতে গিয়াছে সুমতি ।” সুমতি প্রশ্ন করে নাই, আপনা হইতে বলিল বলিয়া অক্ষয়ের কথাটা একটু যেন কৈফিয়তের মতই শোনাইল । সুমতি বলিল “ও ।” ‘ওকে শ্মশানে নিয়ে যাবার আগে তোমায় একটা কথা বলতে চাই সুমতি।” অলকার শবকে শোনাহয় তাহাকে অক্ষয়ের কি বলিবার থাকিতে পারে সুমতি ভাবিয়া পাইল না। ভয়ে বিবৰ্ণ হইয়া বলিল “কি কথা ?” অক্ষয়ের স্বর অচঞ্চল, মুখের ভাব নিব্বিকার । আদালতের BDuDB DDBgg LE SEBD DD kBsDS “ও যে বাঁচবে না, প্ৰথম থেকেই আমি তা জানতাম सूभख्5ि ।' "জানতেন ! না না, জানতেন না ।” “কিন্তু ওকে বাঁচাবার চেষ্টা যে আমি প্ৰাণপণেই করেছি, তুমি তার সাক্ষী । - A অক্ষয় এতক্ষণ সোজা হুইয়া বসিয়া ছিল, এইবার আরাম কেদারায় ঠেস দিল । যত নিঃশব্দেই চুকিয়া গিয়া থাক অলকার মরণ যে তুচ্ছ হইয়া নাই বুঝিতে কাহারো বাকী রহিল না। সেদিন রাত্রে মুমূর্ষুর ঘরের আবহাওয়ায় যে অস্বাভাবিক ন্তব্ধতা দেখা গিয়াছিল সমস্ত বাড়ীতে ৩াহা যেন ব্যাপ্তি নিয়াছে। অক্ষয় বাহিরে যাওয়া ছাড়িয়া দিয়াড়ে । রোগী অন্য ডাক্তার সংগ্ৰহ করে, অক্ষয় নিজের ধরে খোকাকে নিয়া দিন কাটায়। ইজি চেয়ারটা লে এ ঘরে আনাইয়া নিয়াছে। বলে, “আলস্য নয় সুমতি, এ আমার বিশ্রাম। আর কিছুদিন ওভাবে চললে মারা পড়তাম।” মুমতি কিছুই বলে না। নীরবে খোকাকে দুধ খাওয়ায়। এঘরে অলকার স্মৃতির আমেজটুকুও নাই। কবে যে সে এ ঘরে আসিত, আলমারি খুলিয়া গুছানো জামা কাপড়গুলি মেঝেতে নামাইয়া আবার গুছাইয়া তুলিত, বড় আয়নার সামনে দাঁড়াইয়া চুল বাধা শেষ হইলে হাই তুলিয়া খাড় তাকাইয়া তাহার দিকে চাহিয়া হাসিত, অক্ষয়ের বিশ্বাস সে তাহা সম্পূর্ণ বিশ্বত হইয়াছে। সুমতি কোন যে ঘরের সর্বত্ৰ অলকার অবলুপ্ত স্মৃতি আবিষ্কারের চেষ্টা করে অক্ষয় তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারে না। বাহিরে বাম কাম করিয়া বৃষ্টি পড়িতেছে, ঘরের বাতাস ভিজিয়া ভারি, আলো মান। খোকাকে নিতে গিয়া কেমন করিয়া সুমতির হাতশুদ্ধ কয়েক মুহূৰ্ত্তের জন্য চাপিয়া ধরিয়াছিল অক্ষয় জানে না। ইচ্ছা করিয়া যে নয় সুমতি মানিক-গ্ৰন্থাবলী তাহা বুঝিতে পারিয়াছিল বলিয়াই অক্ষয়ের অনুমান । তথাপি কয়েক মিনিট পরেই আলমারির উপরের তাকে লুকানো একতাড়া চিঠি সে খুজিয়া পাইল । অলকাকে লেখা অক্ষয়ের প্ৰেমপত্র। একখানা নয় দু’খানা নয় পাঁচিশ ত্ৰিশখানা । সে যেন রঙিন সুতায় বাধা একরাশি পুরাতন, ব্যবহৃত, বিবৰ্ণ প্ৰেম ! আজ নিশ্চয় নয়। কবে যেন সুমতি চিঠিগুলি খুজিয়া পাইয়াছিল। নাহিলে সোজা আলমারি খুলিয়া ভাজ করা শীতের পোষাকগুলির পিছনটা এখন সে হাতড়াইবে কেন ? চিঠির তাড়াটা নিয়া গম্ভীর হইয়া অক্ষয় বলিল, “মরা মানুষের জন্য শোক করা কীৰ্ত্তব্য, একথা তুমিও জান আমিও জানি । সুমতি কিছুই বলিল না । “কিন্তু তার অত্যাচারটাও স্বাকার করে নেওয়া উচিত কিনা সে বিষয়ে আমার রীতিমত সন্দেহ আছে সুমতি।” এবারেও সুমতি নীরব হইল। “ওটা ভূতের উপদ্রবেরই সামিল। আত্মীয় পর কোন ভূতের উপদ্রব গ্রাহ করা উচিত কি ? সে কত বড় ভীরুতার व्झ० दव्याख्5 !' এ যেন বিশেষ করিয়া তাহাকেই তিরস্কার করা। বড় আয়নার মধ্যে নিজের বিধবা বেশ প্ৰতিবিম্বিত হইয়াছিল, চাহিয়া দেখিয়া সুমতির চোখে জল আসিল । মাঝে মাঝে স্থগিত হইতে লাগিল বটে। কিন্তু বৃষ্টি একেবাক্সে কামিল না। দিনগুলি রুক্ষ হইয়া উঠিতে উঠিতে আবার জলে ভিজিয়া যাইতেছে, এ বাদল আশীৰ্ব্বাদের মতই। কিন্তু সুমতির ভাল লাগিতেছিল না। দ্বিপ্রহরে খোকাকে কোলে নিয়া নিজের ঘরে সে বসিয়াছিল, সকাল হইতে যে স্তিমি৩ বেদন৷ পড়া দিতেছিল এখন তাহ| গাঢ় হইয়া উঠিয়াছে। নন্দ আজি সারাদিন খায় নাই। দোকান হইতে সকাল সকাল ফিরিয়া সেই যে সে শুইয়াছিল। আর ওঠে নাই। ডাকিতে গিয়া সুমতি শুনিয়াছিল। তাহার শরীর ভাল নয়, সে খাইবে না। শরীরের কি হইয়াছে জিজ্ঞাসা করিয়া জবাব মেলে নাই। অথচ কোথায় ষে তাহার অপরাধ সুমতি ভাবিয়া পাইতেছিল না। তাহার বয়স তেইশ, সে যুবর্তী সে সুন্দরী তাহার স্বামী নাই। ইহা যদি সকলে তাহার অপরাধ ‘বলিয়া গণ্য করিয়া থাকে, এবার তাহার মরাই ভাল। কিন্তু কিছুই তো সে করে নাই। প্ৰাণপণে পারিপাশ্বিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখিয়া চলিবার চেষ্টার কবে তাহার ক্রটি ঘটিয়াছে ? তাহাকে নিয়া নন্দর অনধিকার চর্চায় শুধু ততটুকু রাগই সে করিয়াছে যতটুকু রাগ না হইলে মানায় না, সে রাগের জের ট'নিয়া চলিবার চেষ্টাও সে করে নাই। সকলের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক সহজ ও সাধারণ করিয়া রাখিতে সারাদিন ব্যাপৃত থাকিয়াছে।