পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

西a动 মন্দা দেখিতে পায় নাই। তবু সে সায় দিয়া বলে, পিসীর আদরে হাসবে না ? কি আশ্চৰ্য কাণ্ড ঠাকুরবি । ওইটুকু ছেলে হালে! এরকম আশ্চৰ্য কাণ্ড দিবারাত্রিই ঘাঁটিতে থাকে। খোকার সম্বন্ধে এবার সে কিনা অনেক বিষয়েই উদাসীন থাকিবে ঠিক করিয়াছে, খোকার আশ্চর্ষ কাণ্ডগুলিতে অনেক সময় শ্যাম শুধু তাই মনে মনে আশ্চৰ্য হয়, বাহিরে কিছু প্ৰকাশ করে না । খোকার হাত পা নাড়িয়া খেলা করা দেখিয়া মনে যখন তাহার দোলা লাগে, খেলার অর্থহীন হাত-নাড়া আর ক্ষুধার সময় স্তন খুজিয়া হাত-নাড়ার পার্থক্য লক্ষ্য করিয়া তাহার যখন সকলকে ডাকিয়া এ ব্যাপার দেখাইতে ইচ্ছা হয়, শ্যামা তখন নিজেকে সতর্ক করিয়া দেয়। স্মরণ করে যে সন্তানকে উপলক্ষ করিয়া জননীর অসংযত উল্লাস অমঙ্গলজনক। আনন্দের একটা সীমা ভগবান মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন, মানুষ তাহা লঙ্ঘন করিলে তিনি রাগ করেন। তবু সব সময় শ্যামা কি আর নিজেকে সামলাইয়া চলিতে পারে ? অন্যমনস্ক অবস্থায় হঠাৎ একসময় বা করিয়া খোকাকে সে কোলে তুলিয়া লয়। তাহাব পাজরে একদিকে থাকে। হৃৎপিণ্ড আরেক দিকে থাকে খোকা, খোকার লালিম পা দু'টি হইতে কেশ-রিরল মাথাটি পর্যন্ত শ্যামা অসংখ্য চুম্বন করে, দীর্ঘনিশ্বাসে খোকার দেহের আভ্ৰাণ লয়। তারপর সে অনুতাপ করে। বাড়াবাড়ি করিয়া একবার তাহার সর্বনাশ হইয়াছে, তৰু কি শিক্ষা হইল না ? শীতলের মিশ্র খাপছাড়া প্ৰকৃতিতেও বাৎসল্যের আবির্ভাব হইয়াছে। বাৎসল্যর রসে তাহার ভীরু উগ্ৰতাও যেন একটু নরম হইয়া আসিয়াছে। পিতৃত্বের অধিকার খাটাইয়া ছেলের সঙ্গে সে একটু মাখামাখি করিতে চায়, শ্যামা সািভয়ে বাধা দিলে রাগ করার বদলে ক্ষুশ্নই যেন হয়,-প্ৰকৃতপক্ষে, রাগ করার বদলে ক্ষুন্ন হয় বলিয়াই তাহার বিপজ্জনক আদরের হাত হইতে ছেলেকে বাচাইয়া চলিবার সাহস শ্যামার হয়। সে উপস্থিত না থাকিলে ছেলেকে কোলে তুলিতে শীতলকে সে বারণ করিয়া দিয়াছে। মাঝে মাঝে দু’চার মিনিটের জন্য ছেলেকে স্বামীর কোলে সে দেয়, কিন্তু নিজে কাছে দাড়াইয়া থাকে, পুলিসের মত সতর্ক পাহারা C; মাঝে মাঝে শীতল তাহাকে ফাকি দিবার চেষ্টা করে। রাত্রে হয়ত সে জাগিয়া আছে, খোকা কাদিল। চুপি চুপি চৌকি হইতে নামিয়া মেঝেতে পাতা বিছানায় ঘুমন্ত শ্যামার পাশ হইতে খোকাকে সে সন্তৰ্পণে তুলিয়া লয়-চোরের মত। অনভ্যস্ত অপটু হাতে খোকাকে বুকের কাছে ধরিয়া রাখিয়া নিজে সামনে পিছনে দুলিয়া তাহাকে সে দোলা দেয়, মৃদু গুনগুনানো সুরে ঘুমপাড়ানো ছড়া কাটে। বলে, "আয় রে পাড়ার ছেলেরা মাছ ধরতে যাই, মাছের কঁটা পায় S) ফুটেছে, দোলায় চড়ে যাই।” রাতদুপুরে নিজের মুখে ঘুষ পাড়ানো ছড়া শুনিয়া মুখখানা তাহার হাসিতে ভরিয়া যায়। এ ছেলে কার ?--তার | শ্যামা মানুষ করিতেছে। কারুক, ছেলে শুমারি নয়, তার। এদিকে শ্যামার ঘুম ভাঙ্গে। কচি ছেলের বুড়ি মা কি BBD DD BD BDB DBDK BBDB LDBD DOOL উঠিয়া বসিয়া শীতলের কাণ্ড চাহিয়া দেখিতে শ্যামার মন্দ লাগে না । কিন্তু মনকে সে অবিলম্বে শক্ত করিয়া ফেলে। বলে, কি হচ্ছে ? শীতল চমকাইয়া খোকাকে প্ৰায় ফেলিয়া দেয়। শ্যামা বলে, ঘাড়টা বেঁকে আছে। ওর কত লাগছে বুঝতে পারছি ? লাগলে কঁাদিত -শীতল বলে । কঁদবে কি ? যে ঝাকানি ঝাকাছ, আঁৎকে ওর কান্না বন্ধ হয়েছে - শ্যামা বলে । শীতল প্ৰথমে ছেলে ফিরাইয়া দেয়। তারপর বলে, বেশ করছি! অত তুমি লম্বা লম্বা কথা বলবে না বলে দিচ্ছি, খপদার। শীতল শুইয়া পড়ে। সে সত্যসত্যই রাগ করিয়াছে অথবা এটা তার ফাক গজনি শ্যামা ঠিক তাহা বুঝিতে পারে না। খানিক পরে সে বলে, আমি কি বারণ করেছি ছেলে দেব না! একটু বড় হোক, নিও না তখন, যত খুসি নিও। ওকে ধরতে বলে আমারি এখন ভয় করে! কত সাবধানে নাড়াচাড়া করি, তবু কালকে হাতটা মুচড়ে গেলশীতল বলে, আরো বাপরে, বাপ | রাত দুপুরে বকর বকর করে এ যে দেখছি ঘুমোতেও দেবে না । শীতলের মেজাজ ঠাণ্ড হইয়া আসিয়াছে সন্দেহ নাই। রাগ সে করে না, বিরক্ত হয়। মন যে তাহার নরম হইয়া আসিয়াছে অনেক সময় এটুকু গোপন করিবার জন্যই সে যেন রাগের ভান করে, কিন্তু আগের মত জমাইতে পারে না। মন্দাকে নেওয়ার জন্য তাহার শাশুড়ী বারবার পত্ৰ লিখিতেছিলেন, মন্দা বারবার জবাব লিখিতেছিল যে পড়িয়া গিয়া তাহার কোমরে ব্যথা হইয়াছে, উঠিতে পারে না, এখন যাওয়া অসম্ভব। শেষ পর্যন্ত শাশুড়ী বোধ হয় সন্দেহ করিলেন। এক শনিবার রাখালকে তিনি পাঠাইয়া দিলেন কলিকাতায় ৷ রাখালের স্নেহ হ্যামা ভুলিতে পারে নাই, সে আসিয়াছে শুনিয়াই আনন্দে সে উত্তেজিত হইয়া উঠিল, কিন্তু আনন্দ তাহার টিকিল না। রাখালের ভাব দেখিয়া সে বড় দমিয়া গেল। এতকাল পাের তার দেখা পাইয়া রাখাল খুসি হইল মামুলি ধরণে, কথা বলিল অঙ্গমনে, সংক্ষেপে। শ্যামার ছেলের সম্বন্ধে তাহার কিছুমাত্র কৌতুহল দেখা গেল না । সারাদিন পরে বিকালে ব্যাপার বুঝিয়া মন্দা স্বামীকে বলিল, তুমি কি গো ? বৌ কতবার ছেলে কোলে কাছে এল একবার তাকিয়ে দেখলে না ?