পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRV মামা গভীর হইয়া বলে, বড় বুদ্ধি তোর ছেলের শ্যাম, মন্ত বিদ্বান হবে বড় হয়ে। তামাকের ব্যবস্থা বুঝি রাখিস না, এ্যা ? খায় না, শীতল খায় না তামাক ? আগে খেত, কিন্তু কে অত দেবে মিনিটে মিনিটে তামাক সেজে ? যা ঝি আমার, বাসন মাজতেই বেলা কাবার-আর আমার তো দেখছই। মামা, নিশ্বাস ফেলবার সময় পাইনে সারাদিন-খেটে খেটে হাড় কালি হয়ে গেল। এদিকে বাবু তো কম নন, নিজে তামাক সেজে খাবার মুরোদ নেই, এখন বিড়ি-টিড়ি খায়। ময়েও তেমনি খুকুর খুকুর কেসে ! দে। তবে আমাকে দুটো বিড়ি-টিড়িই আনিয়ে দে বাবু। শ্যামা উৎসাহিত হইয়া বলে, দেব মামা, হাঁকো তামাক টামাক সব আনিয়ে দেব ? এই তো কাছে বাজার, যাবে আর নিয়ে আসবে। রাণী, একবার শোনা দিকি মা। শু্যামার ঝি সত্যভামা শ্যামার ছোট ছেলেটার জন্মের কয়েক ঘণ্টা আগে মরিয়া গিয়াছিল, ছেলে যদি শ্যামার না হইত, হইত। মেয়ে, কারো। তবে আর বুঝিতে বাকি থাকিত না যে বাড়ির ঝি পেটের বিী হইয়া আসিয়াছে। সত্যভামার মেয়ে রাণী এখন শ্যামার বাড়িতে কাজ করে। রাণীর বিবাহ হইয়াছে, জামাই ভূষণ থাকে শ্বশুরবাড়িতেই, শীতল তাহাকে কমল প্রেসে একটা চাকরী জুটাইয়া দিয়াছে। রাণী বাজার হইতে তামাক খাওয়ার সরঞ্জাম আনিয়া তামাক সাজিয়া হুকায় জল ভরিয়া দিল, মামা আরামের সঙ্গে তামাক টানিতে টানিতে বলিল, তোর বিটা তো বড় ছেলেমানুষ শ্যাম, কাজকর্ম পারে ? ছাই পারে, আলসের একশেষ, আবার বাবুয়ানির সীমে নেই, ছুড়ির চলন দেখছি না মামা ? ওর মা আমার কাছে অনেকদিন কাজ করেছিল তাই রাখা, নইলে মাইনে দিয়ে অমনি বি কে রাখে ? খাওয়া দাওয়া শেষ হইতে দুটা ৰাজিল। শ্যামা সবে পান সাজিয়া মুখে দিয়াছে, শীতল ফিরিয়া আসিল। শ্যামা অবাক হইয়া বলিল, এত শীগগির ফিরলে যে ? মামার সঙ্গে একটু কথাবার্তা বলব, প্রেসে কাজকর্মও নেই বেশ করেছ। যেমন করে আফিসে চলে গেলে, মামা না জানি কি ভেবেছিল! শীতল ইতস্তত করে, কি যেন সে বলিবে মনে করিয়াছে। সে একটা পান খায়। শ্যামার মুখের দিকে চাহিয়া মনে মনে কি সব হিসাব করে। হঠাৎ জিজ্ঞাসা করিল, মামা ক'দিন থাকবেন। এখন, না ? শু্যামা বলিল, ক'দিন কেন ? বরাবর থাকবেন,-আমরা থাকতে বুড়ো বয়সে হোটেলের ভাত খেয়ে মরবেন কি இது ? •። আমিও তাই বলছিলাম -পয়সা কড়ি কিছু করেছেন মনে হয়, এা ? মানিক-গ্ৰন্থাবলী মনে তো হয়, এখন আমাদের আদেষ্ট । মামা একটা ঘুম দিয়া উঠিলে বিকালে তাহারা চারিদিকে ঘেরিয়া বসিয়া গল্প শুনিতে লাগিল, শহর গ্রাম অরণ্য পর্বতের গল্প, রাজা-মহারাজা সাধু-সন্ন্যাসী চোরডাকাতের গল্প, রোমাঞ্চকর বিপদ-আপদের গল্প। মামা কি কম দেশ ঘুরিয়াছে, কম মানুষের সঙ্গে মিশিয়াছে ! সুদূর একটা তীর্থের নাম কর, যার নামটি মাত্র শ্যামা ও শীতল শুনিয়ছে, যেমন রামেশ্বর সেতুবন্ধ, নাসিক, বদরীনাথমামা সঙ্গে সঙ্গে পথের বর্ণনা দেয়, তীর্থের বর্ণনা দেয়, সব যেন রূপ ধরিয়া চোখের সামনে ফুটিয়া ওঠে। সেই বিধবা সঙ্গিনীটি কতকাল মামার সঙ্গে ছিল, কেহ জিজ্ঞাসা করিতে পারে না, মামার যাযাবর ” জীবনের ইতিবৃত্ত শুনিয়া কিন্তু মনে হয়, চিরকাল সে দেশে দেশে ঘুরিয়াছে এক, সার্থী যদি কখনো পাওয়া গিয়া থাকে, সে পথের সাণী, পুরুষ। শ্যামা একবার সুকৌশলে জিজ্ঞাসা করে, গ্ৰাম হইতে বাহির হইয়া প্ৰথমে মামা কোথায় গিয়াছিল, মাম। সোজাসুজি জবাব দেয়, কাশী,-কাশীতে ছিলাম পাঁচছ’টা মাস, ভুলে টুলে গিয়েছি সে সব বাপু, সে কি আজকের 관에 1 শ্যামা বলে, একা একা ঘুরে বেড়াতে ভাল লাগত মামা ? মামা বলে, একা ঘুরেই তো সুখ রে, ভাবনা নেই, চিন্তা নেই, যখন যেখানে খুসি পড়ে থাক, যেখানে খুসি চলে যাও, কারো তোয়াক্কা নেই, জুটলো খেলে না। জুটলো উপোস করলে-চিরকাল ঘরের কোণে কাটালি, সে আনন্দ তোরা কি বুঝবি ? একবার কি হল,-নীলগিরি পাহাড়ের গোড়ায় একটা গ্রামে গিয়েছি। এক সাধুর সঙ্গে, গ্রামটার নাম বুঝি তুড়িগোড়য়া, পাহাড়ের সারা চলে গিয়েছে গ্রামের ধার দিয়ে। পাহাড়ে উঠে দেখতে ইচ্ছা হল। গা থেকে উড়িয়া মেয়েরা পাহাড়ের বনে কাঠ কাটতে যায়, তাদের সঙ্গে

  • গেলাম। সে কি জঙ্গল রে শ্যামা, এইটুকু সরু পথ,

দুপাশে এক পা সরবার যে নেই, যেন গাছপালার দেয়াল গাথা। ফিরবার সময় পপে হাতীর পাল পড়ল, আর নামবার যে নেই। চারদিন হাতীর পাল পথ আটকে রইল, চারদিন আমরা নামতে পারলাম না। কি সাহস মেয়েগুলোর বলিহরি যাই, চারদিন টু শব্দটি করলে না, রাত্রে আমাকে বলত ঘুমোতে, আর নিজেরা কাঠকটা দা বাগিয়ে ধরে পাহারা দিয়ে জেগে থাকত । আর একদিন-- সেদিন আর মামার জিনিসপত্র আনা হইল না, পরদিন গিয়া লইয়া আসিল । শুষ্ঠামা ভাবিয়াছিল, মামা কত জিনিষ না জানি আনিবে, DBB DBD K DBBSS DD DDD DBB DLDBYu S একটা ব্যাগ, কম্বলে জড়ানো একটা বিছানা-লেপ, তোবক