পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

W7 ́ o মানিক-গ্ৰন্থাবলী ধীরেনকে যখন ডেকে আনা হল, কলসী কলসী জল ঢ়েলে দামিনীর মূমুর্খা ভাঙ্গা হয়েছে। কিন্তু সে তাকাচ্ছে অর্থহীন দৃষ্টিতে, আপন মনে হাসছে আর কঁদিছে এবং যারা তাকে ধরে রেখেছিল তাদের আঁচড়ে কামড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছে । ধীরেন। গভীর চিন্তিত মুখে বলল, “শাপুরের কৈলাস ডাক্তারকে একবার ডাকা দরকার। ( আমি চিকিৎসা করতে পারি, তবে কি জানেন, আমি তো পাশ করা ডাক্তার নই, দায়িত্ব নিতে ভরসা হচ্ছে না । বুড়ো পঙ্কজ ঘোষাল বলাই চক্ৰবৰ্ত্তীর অনুগ্রহে বহুকাল সপরিবারে পরিপুষ্ট হয়েছিলেন, তিনি বললেন, ‘ডাক্তার ? ডাক্তার কি হবে। তুমি আমার কথা শোন বাবা নবীন, কুঞ্জকে অবিলম্বে ডেকে পাঠাও।” গায়ের যারা ভিড় করেছিল তারা প্রায় সকলেই বুড়ো ঘোষালের কথায় সায় দিল । নবীন জিজ্ঞেস করল, “কুঞ্জ কত নেয় ?” ধীরেন বলল, “ছি, ওসব দুর্বদ্ধি কোরো না। নবীন ! আমি বলছি তোমায়, এটা অসুখ, অন্য কিছু নয়। লেখা পড়া শিখেছি, জ্ঞান বুদ্ধি আছে, তুমিও কি বলে কুঞ্জকে চিকিৎসার জন্য ডেকে পাঠাবো ? নবীন আমতা আমতা করে বলল, “এসব খাপছাড়া অসুখে ওদের চিকিৎসাই ভাল ফল দেয় ভাই।’ বয়সে নবীন তিনচার বছরের বড় কিন্তু এককালে দু’জনে একসঙ্গে স্কুলে একই ক্লাসে পাশাপাশি বসে লেখাপড়া করত। বোধ হয় সেই খাতিরেই কৈলাশ ডাক্তার ও কুঞ্জ মাঝি দু'জনকে আনতেই নবীন লোক পাঠিয়ে দিল । কুঞ্জই আগে এল। লোক পৌছবার আগেই সে খবর পেয়েছিল চক্রবত্তাঁদের বেীকে অন্ধকারের অশরীরী শক্তি আয়ত্ত করেছে। কুঞ্জ নামকরা গুণী। তার গুণপন দেখবার লোভে আরও অনেকে এসে ভিড় বাড়িয়ে দিল। “ভর সাঝে ভর করেছেন। সহজে ছাড়বেন লা ।” ওই বলে সকলকে ভয় দেখিয়ে সঙ্গে সঙ্গে আবার অভয় দিয়ে কুঞ্জ বলল, “তবে ছাড়তে হবেই শেষ তক। কুঞ্জ মাঝির সাথে তো চালাকি চলবে না ।” ঘরের দাওয়া থেকে সকলকে উঠানে নামিয়ে দেওয়া হল। বিড় বিড় করে মন্ত্র পড়তে পড়তে কুঞ্জ দাওয়ায় জল ছিটিয়া দিল। দামিনীর এলো চুল শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হল দাওয়ার একটা খুঁটির সঙ্গে, দামিনীর না রইল বসবার উপায়, না রইল পালাবার ক্ষমতা । তাকে আর কারো ধরে রাখবার প্রদােয়াজন রইল না। নড়তে গিয়ে চুলে টান লাগায় দামিনী আৰ্ত্তনাদ করে উঠতে লাগল। কুঞ্জ টিটকারী দিয়ে দিয়ে বলতে লাগল, ‘রও বাছাধন রও। এখনি হয়েছে কি ! মজাট টের পাওয়াচ্ছি। তোমায়। ধীরেন প্রথম দিকে চুপ করে ছিল। বাধা দিয়ে লাভ নেই। গায়ের লোক কথা শোনে না, বিরক্ত হয়। এবার সে আর ধৈৰ্য্য ধরতে পারল না । “তুমি কি পাগল হয়ে গেছ, নবীন ?” “তুমি চুপ কর, ভাই।' উঠানে ত্ৰিশ পয়ত্ৰিশ জন পুরুষ ও নারী এবং গোটা পাঁচেক লণ্ঠন জড়ো হয়েছে। মেয়েদের সংখ্যা খুব কম, যারা এসেছে বয়সও তাদের বেশী। কম বয়সী মেয়েরা আসতে সাহস পায় নি, অনুমতিও পায় নি। যদি ছোয়াচ লবে, নজর লাগে, অপরাধ হয় । মন্ত্রমুগ্ধের মত এতগুলি মেয়েপুরুষ দাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঘোষাঘেষি করে দাড়িয়ে থাকে, এই দুলভ রোমাঞ্চ থেকে তাদের বঞ্চিত করার ক্ষমতা নবীনের নেই দাওয়াটি যেন ষ্টেজ, সেখানে যেন মানুষের জ্ঞানবুদ্ধির অতীত রহস্যকে সহজবোধ্য নাটকের রূপ দিয়ে অভিনয় করা হচ্ছে, ঘরের দুয়ারে কুঞ্জ যেন আমদানী করেছে জীবনের শেষ সীমানার ও রের ম্যাজিক । এমন ঘরোয়, এমন হয়ে উঠেছে দামিনীর মধ্যে আদেহী ভয়ঙ্করের এই ঘনিষ্ঠ আবির্ভাব! ভয় সকলে ভুলে গেছে। শুধু আছে। তীব্ৰ উত্তেজনা এবং কৌতুহল ভরা পরম উপভোগ্য শিহরণ। এক বা সামনে এগিয়ে, পাশে সরে, পিছু হটে, সামনে পিছনে দুলে দুলে কুঞ্জ দুৰ্বোধ্য মন্ত্র আওড়াতে থাকে। মালসাতে আগুন করে তাতে সে একটি দুটি শুকনো পাতা আর শিকড় পুড়তে দেয়, চামড়া পোড়ার মত একথা উৎকট গন্ধে চারিদিক ভরে যায়। দামিনীর আর্তনাদ ও ছটফটানি ধীরে ধীরে কমে আসছিল, এক সময় খুটিতে পিঠ ঠেকিয়ে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে সে বোজ' বোজ’ চোখে কুঞ্জর দিকে তাকিয়ে নিম্পন্দ হরে রইল। তখন একটা কঁচা হলুদ পুড়িয়ে কুঞ্জ তার নাকের কাছে ধরল। দামিনীর দুলু ঢুলু চোখ ধীরে ধীরে বিস্ফারিত হয়ে উঠল। সৰ্বাঙ্গে ঘন ঘন শিহরণ বয়ে যেতে লাগল। 'কে তুই ? বল, তুই কে ?” “আমি শুভ্ৰ গো, শুভ্ৰ । আমায় মেরো না ।” ‘চাটুয্যে বাড়ীর শুভ্ৰা ? যে খুন হয়েছে ?” "হ্যা গো হঁ্যা । আমায় মেরো না ।” নবীন দাওয়ার একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল, তার দিকে মুখ ফিরিয়ে স্কুঞ্জ বলল, “ব্যাপার বুঝলেন কৰ্ত্তা ?’ উঠান থেকে চাপা গলায় বুড়ো ঘোষালের নির্দেশ এল, 'কে খুন করেছিল শুধোও না কুঞ্জ ? ওহে কুঞ্জ, শুনছো ? কে শুল্লাকে খুন করেছিল শুধিয়ে নাও চটু করে।” কুঞ্জকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হল না, দামিনী নিজে থেকেই DDB SBB DBB S DBBDS BDSSDDBDS SDBD BD शून कद्रष्ट् ।।' নানাভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অনেকবার তাকে প্রশ্ন করা হল কিন্তু দামিনীর মুখ দিয়ে এ ছাড়া আর কোন জবাব বার হল না যে সে শুভ্র এবং বলাই তাকে খুন করেছে। প্ৰতারপর