পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হলুদ পোড়া একসময় তার মুখ বন্ধ হয়ে গেল, নাকে হলুদাপোড়া ধরেও আর তাকে কথা বলানো গেল না। কুঞ্জ অন্য একটি প্রক্রিয়ার আয়োজন করছিল। কিন্তু কৈলাস ডাক্তার এসে পড়ায় আর সুযোগ পেল না। কৈলাসের চেহারাটি জমকালো, প্ৰকাণ্ড শরীর, একসােথ কঁচাপাকা চল, BD SDDBS SS BBBB DBODB LDDL SDDLSL SS DDDS এসে দাড়িয়েই ষাড়ের মত গর্জন করতে করতে সে সকলকে গালাগালি দিতে আরম্ভ করল, কুঞ্জির আগুনের মালসা তার দিকেই লাথি মেরে ছুড়ে দিয়ে বলল, “দাড়া হারামজাদা, তোকে ফাসি , কাঠে ঝুলোচ্ছি। ওষুদ দিয়ে বৌমাকে আজ মেরে ফেলে থানায় তোর নামে রিপোর্ট দেব, তুই খুন করেছিস।” কৈলাস খুঁটিতে বাধা চুল খুলে দামিনীকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বার্লাই-এর দাদামশায়ের আমলের প্রকাণ্ড খাটের বিছানায় শুইয়ে দিল । শ্যাট করে তার বাহুতে ছুচি ফুটিয়ে গায়ে ঢুকিয়ে দিল ঘুমের ওষুধ । দামিনী কাতরভাবে বলল, “আমায় মেরো না গো, মেরো না। আমি শুভ্ৰা। চাটুয্যে বাড়ীর শুভ্ৰা।' কয়েক মিনিটের মধ্যে সে ঘুমিয়ে পড়ল । দামিনীর মুখ দিয়ে শুলা বলাই চক্রবত্তীর নাম করায় অনেক বিশ্বাসীর মনে যে ধাঁধার সৃষ্টি হয়েছিল, বুড়ো ঘোষালের ব্যাখ্যা শুনে সেটা কেটে গেল। শুলার তিন দিন আগে বলাই চক্রবত্তী মরে গিয়েছিল সন্দেহ নেই কিন্তু শুধু জ্যান্ত মানুষ কি মানুষের গলা টপে মারে ? আর কিছু মারে না ? শ্মশানে মশানে দিনক্ষণ প্ৰভৃতির যোগাযোগ ঘটলে পথভোলা পথিকের ঘাড় তবে মাঝে মাঝে মটকে দেয় কিসে । ব্যাখ্যাটা দেওয়া উচিত ছিল কুঞ্জ গুণীর। বুড়ো ঘোষাল আগেই সকলকে শুনিয়ে দেওয়াতে জোর গলায় তাকে সমর্থন করেই নিজের মৰ্য্যাদা বাচানো ছাড়া তার উপায় রইল না। তবে কথাটাকে সে ঘুরিয়ে দিল একটু অন্যভাবে, যার ফলে অবিশ্বাসীর মনে পৰ্য্যন্ত খটকা বাধা সম্ভব হয়ে উঠিল। বলাই চক্ৰবৰ্ত্তাই শুভ্রাকে খুন করেছে বটে। কিন্তু সোজাসুজি নিজে নয়। কারণ, মরার এক বছরের মধ্যে সেটা কেউ পারে না, ওই সময়ের মধ্যে শ্ৰাদ্ধ-শান্তি না হলে তবেই সোজাসুজি মানুষের ক্ষতি করার ক্ষমতা জন্মায়। বলাই চক্ৰবত্তী একজনকে ভর করে তার মধ্যস্থতায় শুভ্ৰাকে খুন করেছে, তার রক্তমাংসের হাত দিয়ে । না, যাকে সে ভর করেছিল তার কিছু মনে নেই। মনে কি থাকে। এক রাত্রে অনেক কাণ ঘুরে পরদিন সকালে এই কথাগুলি ধীরেনের কাণে গেল । অগ্রহায়ণের উজ্জল মিঠে মোদ তখন চারিদিকে ছড়িয়ে আছে, বর্ষার পরিপুষ্ট গাছে لا صطا আর আগাছার জঙ্গলে যেন পার্থিব জীবনের ছড়াছড়ি। বাড়ীর পিছনে ডোবাটি কচুরীপানায় আচ্ছন্ন, গাঢ় সবুজ ংখ্য রসালো পাতা, বর্ণনাতীত কোমল রঙের অপরূপ ফুল। তালগাছের গুড়ির ঘাটটি কাত্তিক মাসেও প্ৰায় জলে ডুবে ছিল, এখন জল কমে আৰ্দ্ধেকের বেশী ভেসে উঠেছে। টুকরো বসিয়ে ধাপগুলি এবার ধীরেন বিশেষ করে শুভ্রার জন্য বানিয়ে দিয়েছিল, সাত মাসের গর্ভ নিয়ে ঘাটে উঠতে নামতে সে যাতে পা পিছলে আছাড না খায়। পাড়ার মানুষ বাড়ী বয়ে গায়ের গুজব শুনিয়ে গেল, আবেষ্টনীর প্রভাবে উদ্ভট কথাগুলি সঙ্গে সঙ্গে ধীরেনের মন থেকে বাতিল হয়ে গেল। ক্ষুব্ধ হবার অবসরও সে পেল না। ডোবার কোনদিক থেকে কি ভাবে কে সেদিন সন্ধ্যায় ঘাটে এসেছিল, এই পুরোণো ভাবনা সে ভাবছিল অনেকক্ষণ থেকে। তাই সে ভাবতে লাগল। একমাত্র এই ভাবনা তাকে অন্তমনস্ক করে দেয়। ক্ষোভ ও বিষাদের তার এত প্ৰাচুৰ্য্য এখন যে মাঝে মাঝে কিছুক্ষণের জন্য অন্যমনস্ক হতে না পারলে তার অসন্থ কষ্ট হয় । অন্য কোন বিষয়ে তার মন বসে না । ভাতের থালা সামনে ধরে দিয়ে শান্তি বলল, “আমার কিন্তু মনে হয় তাই হবে। নইলে-” কটমট করে তাকিয়ে ধীরেন। ধমক দিয়ে বলল, চুপ।। যা খুলী মনে হোক তোমার, আমায় কিছু বলবে না। খপর্দার।” স্কুলে যাওয়ার পথে যাদের সঙ্গে দেখা হল মুখে তারা কিছু বলল না। কিন্তু তাদের তাকানোর ভঙ্গি যেন আরও স্পষ্ট জিজ্ঞাসা হয়ে উঠল : কথাটা তুমি কি ভাবে নিয়েছ। শুনি ? পুরুতঠাকুর তাকে অনেকক্ষণ দাড় করিয়ে রেখে দোষমোচনের জন্য দরকারী ক্রিয়াকৰ্ম্মের বিষয় আলোচনা করলেন, উপদেশ দিলেন, বিশেষ করে বলে দিলেন যে স্কুল থেকে ফিরবার সময় তার বাড়ী থেকে সে যেন তার নিজের ও বাড়ীর সকলের ধারণের জন্য মাদুলী নিয়ে যায়। স্কুলে পা দেওয়ার পর থেকে ধীরেনের মনে হতে লাগল, সে যেন বাইরের কোন বিশিষ্ট অভ্যাগত স্কুল পরিদর্শন করতে এসেছে, তার সাত বছরের অভ্যন্ত অস্তিত্বকে আজ এক মূহুর্তের জন্য কেউ ভুলতে পারছে না। প্ৰথম ঘণ্টাতেই ক্লাশ ছিল। অৰ্দ্ধেক ছেলে আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে, বাকী অৰ্দ্ধেক নিজেদের মধ্যে গুজগাজ ফিসফিস করছে। নিজেকে জীবন্ত ব্যঙ্গের মত মনে হচ্ছিল। বইয়ের পাতায় চোখ রেখে ধীরেন পড়াতে লাগল। চোখ তুলে ছেলেদের দিকে তাকাতে পারল না। ঘণ্টা কাবার হতেই হেডমাষ্টার ডেকে পাঠালেন। “তুমি একমাসের ছুটি নাও ধীরেন।' “এক মাসের ছুটি ? ‘মখরবাবু এইমাত্র বলে গেলেন। আজ থেকেই চুটি পাৰে, আজ আর তোমার পড়িয়ে কােজ নেই।”