পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

е е е মানিক গ্ৰন্থাবলী উপদেশের কথা কিছু বলা নিরর্থকও বটে, তাতে বিপদের ভয়ও আছে। মনমোহন তাই সহজ সুরে বলে, সামান্য মাইনেতে তুমি ও সব খাও কি করে তাই আশ্চৰ্য লাগে । ধার করোনি তো ?’ 'না আত বোকা নই। কিছু টাকা ছিল।” “একটা দরকারী খবর নিয়ে যাচ্ছি, দাড়াবার সময় নেই। রাগ করো না-ভাই ।” -- বলে আর দেরি না করে মনমোহন জোরে জোরে পা ফেলে এগিয়ে যায় । মনমোহনও আরেকটা জ্বালা হয়ে আছে অক্ষয়ের মনে । ব্যাঙ্কে চাকরিটা নেবার অল্প দিনের মধ্যে অতি সুন্দর একটা পরিচয় গড়ে উঠেছিল তার ওর সঙ্গে, সহজ সংযত তৃপ্তিকর । হাসি-খুসীি মিষ্টি স্বভাব মনমােহনের। কথাবার্তা চালচলনে সাধারণ চলতি আত্মাভিমানেরও অভাবের জন্য প্ৰথমে তাকে খুব মৃদু ও নিরীহ মনে হয়েছিল। ধীরে ধীরে অক্ষয় টের পেয়েছে তার ভেতরটা বেশ শক্ত, মোটেই তলতলে নয়, গোবেচারিত্বের লক্ষণ নয়। তার আচরণের মৃদুতা । মনমোহনের থে অনেক পড়াশোনা আর গভীর চিন্তাশক্তি আছে তা জানতেও সময় লেগেছিল। নিজের কথা বলতে যেমন, বহু কথা বলতেও মনমোহন তেমনি অনিচ্ছুক । মনমোহন তাকে অবজ্ঞা করে, ঘৃণা করে । নিশ্চয় করে । অন্যের অশ্রদ্ধা স্পষ্ট বোঝা যায় মুখে কিছু না বললেও, মনমোহন শুধু সেটা গোপন করে রাখে। অন্যের সঙ্গে তার অশ্রদ্ধ করার তফাত কেবল এইটুকু। কেন এ দয়া দেখাবে মনমোহন তাকে, কে চেয়েছে তার উদারতা ? মনমোহনের সঙ্গে কথা বলতে গেলেই আজকাল কেমন একটা গ্রানিকর অস্বস্তি বোধ করে অক্ষয় । পরে এর নানা রকম প্ৰতিক্রিয়া দেখা দেয়। বারে গিয়ে বোধ হয়। আর লাভ নেই এখন। মনমোহনের কাছে কয়েকটা টাকা ধার চেয়ে নিলে কেমন হত ? জীবনে ও উজ্জলতর করে তুলেছে আলোক, ওর কাছে থেকেই টাকা নিয়ে সে তার জীবনের অন্ধকার বাড়াত ! কি চমৎকার ব্যঙ্গ করা হত নিজের সঙ্গে । ধিক । তাকে শত ধিক । অনিচ্ছুক মন্থর পদে সে রাস্ত পার হয়। মিলিটারী পুলিসের একটা গাড়ি বেরিয়ে যায়। তার গা ঘেষে, চাপা পড়ে মরলে অবশ্য অন্যায় হত তারই, এভাবে যে রাস্ত পার হয় তার জীবনের দায়িক সে নিজে ছাড়া আর কেউ নয়। সেও এক চমৎকার ব্যঙ্গ করা হত নিজের সঙ্গে, মনমোহনের কাছে টাকা ধার নিয়ে আজ মদ খাওয়ার মতো। ওখানে ওরা গুলি খেয়ে মরেছে স্বেচ্ছায়, তাই প্ৰত্যক্ষ