পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

झिरु SS সে লোকটা কি পুড়ছে ওই আগুনে ? ধীরে সুস্থে পোষাক ছেড়ে, তাকে বার বার ভয় নেই ভয় নেই বলতে বলতে, পা পৰ্যন্ত ঝোলা যে জামাটা গায়ে দিয়েছিল সেই জামা সুদ্ধ? রাণী জোরে নিশ্বাস টানে-ওখান থেকে এত দূরে ভেসে এসে যেন পোড়া মাংসের গন্ধ তার নাকে লাগা সম্ভব । সে যখন বেরিয়ে আসে। পাগলের মতো, কয়েকজন মিলে সেটাকে মারছিল তার মনে পড়ে। খুন করে কি রেখে এসেছে সেটাকে ওরা চিতায় পুড়বার জন্য ? বেঁধে কি রেখে এসেছে নেওয়ারের খাটটার সঙ্গে জ্যান্ত অবস্থায়? ইস, একটু ধৈৰ্য ধরে সবাইকে বাইরে ডেকে সে নিজেই যদি বাইরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে সেটাকে সজ্ঞানে জ্যান্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে মারবার ব্যবস্থা করে দিয়ে আসত ! ঠাণ্ড কনকনে হাওয়া মুখে লাগছে। রাণীর শীতবােধ নেই। দূরে ওই অত্যাচারীর চিতার আগুনের তাপটাই সে অনুভব করছে, দেহমনের আর সব অনুভূতি মরে গেছে তার। A নিজে শীতে না কেঁপে, গণেশের মা বলেন যাদবকে, “মোদের শোবার লেগে দশগণ্ডা হুকুম না ঝেড়ে, নিজে এসে কান্ত হও না একটু এদের পাশে কথাটা গায়ে দিয়ে ? “শোবার সময় এটা মোর আঁ ? “বসে থেকে কি রাজ্য উদ্ধার করবে ?’-হাই চাপতে গণেশের মা রোগ হাতের মুঠিটাই ঘষতে থাকে। হ্যাএ, ‘ভেবে কি হবে ? ছেলে তো আছে শহরে, গিয়ে একবার পড়তে পারলে ভয়টা কি ? নে যাবার সব তো করেছে এরাই ।” যাদব কথা কয় না । “এক তো নও। আর ? খুব তো সামলেছিলে মেয়াকে, বড়াই কতা! সবার ঘরে মেয়ে বেী, সবাই টের পেলে এমনি ব্যাপার চলতে দিলে আর বঁাচোয়া নেই, তাই না গেল সব মরিয়া হয়ে ছুটে । ধান-তোলা নিয়ে না লাগলে এমন ক্ষেপত না লোক-ভগবানের আশীৰ্বাদ । মেয়াকে তোমারু ছিনিয়ে আনলে, আগুন দিলে ঘাটিতে, হেথা সরিয়ে আনলে মোদের রাতারাতি, শহরতক পৌছে আর দিতে পারবে না ? তুমি কোথা লাগবে উঠে পড়ে, তা নয়, ভয়ে ভাবনায় হাতপা সেঁধিয়ে বসে আছ পেটের মধ্যে !” ডিবরির শিখাটা অবিরত কঁাপিছে উত্তরের হাওয়ায়। গণেশের মার রোগ জীৰ্ণ শীর্ণ দেহটা দেখতে দেখতে বাতাসে সরু গোটে বঁাশের দোলন মনে পড়ে যাদবের । যে ঝড়ে ঘরের চালা উড়ে যায়, বড় বড় গাছ মট-মট ভেঙে পড়ে, সেই ঝড়েও