পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b" शॉनिक यंहांदकीג פ “কাছাকাছি থাকতে পারি না কোথাও গা ঢাকা দিয়ে ? যাদব শুধোয় সংশয়ের সঙ্গে । "ছেলের কাছে যাবে বলছিলে না ? তাই ভাল। কলকাতাতেই যাও।” কেশব বলে চিন্তিত ভাবে দাড়িতে হাত বুলোতে বুলোতে, ‘সাক্ষী দেয়ার দরকার হবে কি না শেষ পর্যন্ত তাই বা কে বলতে পারে। দু'দে প্ৰজাগুলোকে জব্দ করার এ সুযোগ জগৎবাবু ছাড়বে না। ও আবার কি পরামর্শ দেয়, কি দাড় করায়। না, ছেলের কাছেই যাও তুমি।” কেশবের স্ত্রী মেনকা এসে বিনা ভূমিকায় বলে, ‘এসো দিকি তোমরা খেয়ে নেবে দুটি । ডিবরিটা আনিস তো বাছা তুই, কি নাম যেন তোর মা, রাণী ? ওমা, ডিবরি যে নিভলো বলে ।” ‘তেল তো নেই। আর ।” কেশব বলে । ‘রসুইঘরের ডিাবরি থেকে দিচ্ছি একটু।” সবাইকে একসাথে বসিয়ে দেয় মেনকা, রাণী আর গণেশের মাকে পর্যন্ত । খিচুড়ি খেতে বসে যাদবের চোখে হঠাৎ জল আসার উপক্রম হয়। তার মতো গরীব হাঘিরে তুচ্ছ মানুষের জীবনেরও যে দাম আছে দশজনের কাছে, তার মতো লোকের মেয়ের সম্মান যে নিজের মেয়ের সম্মানের মতো হতে পারে দশজনের কাছে, এ জ্ঞান এ অভিজ্ঞতা তাকে প্রায় অভিভূত করে রেখেছে প্রথমাবধি । চিরকাল নিজেকে সে জেনে এসেছে একান্ত অসহায়, দুভিক্ষে হাড়ে মাসে টের পেয়েছে সে বা তার পরিবারের বঁাচন মরণে কিছু এসে যায় না জগতের কারো। আজ সে জেনেছে তা সত্যি নয়। ডান হাতে চােট লেগেছে, মুখে খাবার তুলতে কষ্ট হয়। কিন্তু সে বেদনা যেন গায়ে লাগে না যাদবের, ব্যাণ্ডেজের নীচে মাথার ক্ষতটা যে দপদপ করছে সে যন্ত্রণাও বাতিল হয়ে গেছে তার কাছে। ভিতরে একটা ক্ষোভ আর আক্রোশকেই যেন জাগিয়ে বাড়িয়ে চলছে শরীরের আঘাতগুলির যন্ত্রণ । সে ফিরে আসবে, বৌ-ছেলে-মেয়েকে গণেশের কাছে রেখে সে ফিরে আসবে তার জন্য যারা লড়ছে তাদের সাথে যোগ দিতে । ভাগচাষের বাটােয়ারা আর বেগার খাটা নিয়ে যে লড়াই বাড়ছিল দিন দিন, যে হাঙ্গামার সুযোগে সঁাজ সন্ধ্যায় মেয়েকে তার, টেনে নিয়ে যাবার সাহস ওদের হয়েছে, তাতে ভাল করে যোগ দেয়নি বলে আপসোস হয় যাদবের । তাকে যারা আপন ভাবে, তার জন্য বঁাচন মরণ তুচ্ছ করে, তাদের ব্যাপারে সে উদাসীন ছিল কেমন করে ?