পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rbyr মানিক গ্ৰন্থাবলী এর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এর জন্যই হয়তো এত বেশী আত্মকেন্দ্ৰিক হয়ে উঠেছে হেমন্ত, অতি আহলাদী ছেলেরা যা হয়। “কোথায় গেছে, আসবে।” সীতা উদাস ভাবে বলে। “তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি ? “ও-বেলা একবার এসেছিল বারট-একটার সময় ।” তার কাছে অনুরূপ খোজ নিতে এসেছেন হারানো ছেলের !! পৃথিবীতে এত লোক থাকতে তার কাছে! কথাটা এতক্ষণে খেয়াল হয় সীতার। সুখ-স্বাচ্ছদ্যভরা আগামী দিনের জীবনের পরিকল্পনায় তাকেও তবে ওরা মায়ে-ব্যাটায় হিসাবের মধ্যে ধরে রেখেছে ? এমন হাসি পায় সীতার কথাটা মনে করে। অনুরূপ জানেন, মনে মনে অন্তত এই ধারণা পোষণ করেন যে সীতা দু’দিন পরে তার ছেলের বৌ হয়ে তার বাড়ি যাবে। ছেলের ভাব দেখে তিনি অনুমান করে। নিতে পেরেছেন এই মেয়েটিকে তার পছন্দ হয়েছে, তাই থেকে একেবারে সিদ্ধান্তে পৌছতে বিলম্ব হয়নি। তার এত ভাল ছেলে, এমন উজ্জল তার ভবিষ্যৎ, সীতার পছন্দ-অপছন্দের প্রশ্নটা মনের মধ্যে ঠাইও পায়নি তার । এবার সীতা বুঝতে পারে অনুরূপার মুখে উদ্বেগের, দুর্ভাবনার চিহ্ন জোরালে হয়ে ফোটেনি কেন। ভাবী বৌয়ের সঙ্গে তিনি ভাবী শাশুড়ীর মতো আচরণ করেছেন । ভয়ে-ভাবনায় সীতা কাতর হয়ে পড়বে, তাকে ভড়কে দেওয়া তার উচিত নয়। সীতাকে ভরসা দেবার, তার মনে সাহস জাগিয়ে রাখার দায়িত্ব তারই । সীতার নিলিপ্ত ভাব তাকে রীতিমতো ক্ষুন্ন করেছে, আঘাতও করেছেন। গম্ভীরমুখে রীতিমতো অনুযোগের সুরে অনুরূপ বলেন, — “না জানিয়ে কোন দিন বাড়ি ফিরতে দেরি করে না সীতা । বুঝে উঠতে পারছি না কি হল ।” সীতার হাসি পাচ্ছিল। কিন্তু হাসির রেখাও তার মুখে ফুটল না। সে নিজেও জানত না মনের এ ভাবটা এত ক্ষণস্থায়ী হবে। ক্ষণিকের একটু আমোদ বোধ করে মনটা তার খারাপ হয়ে যায়, নাড়া খায় গভীর ভাবে। হেমন্তের অনেক অন্ধতা, অনেক কুসংস্কার, অনেক দুর্বলতার মানে তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। হেমন্তের দোষ নেই। এমন যার মা, আঁতুড় থেকে আজ এত বয়স পর্যন্ত যার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এই মা নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে, তার হৃদয়-মনের গঠনের ত্রুটির জন্য সে নিজে কতটুকু দায়ী। এটুকু সীতা জানে যে শৈশবে মনের যে গঠন হয়