পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SVV মানিক গ্ৰন্থাবলী অনুরূপ উতলা হয়ে পড়ছেন - এ খবরটা হাসপাতালে হেমন্তকে দেবার নামেই ব্যাকুল হয়ে অনুরূপ কেন বাধা দিয়েছিলেন বুঝতে পারলে, অনুরূপ সম্বন্ধে সীতা বোধ হয় আরও নিশ্চিন্ত হতে পারত। ছেলে পাছে মনে করে তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে এ ভয়টা কত জোরালো অনুরূপার মনে, কত সাবধান তিনি এ বিষয়ে, সীতা সেটা টের পেত । অত বড় ছেলে সন্ধ্য-রাত্রে বাড়ি না ফিরলে ব্যস্ত হওয়া সঙ্গত হয় না, সীতার মুখে এ কথা শুনেই তিনি ভড়কে গিয়েছিলেন। তিনি উতলা হয়ে উঠেছেন, অস্থির হয়ে ছুটে বেরিয়েছেন খোজ নিতে, এ কথা শুনে তঁর বাড়াবাড়িতে যদি বিরক্ত হয় হেমন্ত ! এক দিন একটু দেরি করে বাড়ি ফেরার অধিকারটুকু পর্যন্ত তার নেই ভেবে যদি ক্ষুন্ন হয়! এত ভয়-ভাবনা নিয়েও কিন্তু এক বিষয়ে মনটা শক্ত করে ব্রাখেন। অনুরূপা । ছেলেমানুষী করে হেমন্ত নিজের সর্বনাশ করবে, এটা চুপচাপ বরদাস্ত করার কথা তিনি ভাবতেও পারেন না । বাধা তিনি দেবেন, সামলাবার চেষ্টা করবেন, যতটা তার সাধ্যে কুলোয় । সেজন্য যদি রাগ করে হেমন্ত, দুঃখ পায়, বিরক্ত হয়, উপায় কি ! মনের এই লড়ায়ে ভাবটা আগেও ছিল, এখনো আছে উদ্যত হয়ে, তবে সীতার শাসনটা কাজ দিয়েছে। হেমন্ত ফেরামাত্র লড়াই শুরু করে দেবার ঝোকটা সংহত হয়েছে। এত বড় ছেলেকে বাগাতে হলে সে যুদ্ধটা ধীর স্থির শান্ত সংযতভাবে করতে হবে সীতার মতো, এ বিষয়ে মন সতর্ক হয়ে আছে । তাই, মায়ে ব্যাটায় সংঘর্ষ বাধতে বাধতে রাত্ৰি গভীর হয়ে আসে। রামা ও জয়ন্ত যতক্ষণ জেগে থাকে, অনুরূপ সাধারণ ভাবে কথা বলে যান, হেমন্তের কাজে তার সমর্থন আছে কি নেই, সে ইঙ্গিতও আসে না তার কাছ থেকে । হেমন্ত তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেয়, রমা ও জয়ন্ত হী করে তার কথাগুলি গিলতে থাকে। অনুরূপাও নীরবে শুনে যান। মায়ের ভাবান্তর লক্ষ্য করেও হেমন্ত কিন্তু সে বিষয়ে কিছু বলে না । মার দিক থেকে কথা ওঠা পর্যন্ত ধৈৰ্য ধরে অপেক্ষা সে ভাল মনে করে । মার চুপ-চাপ থাকার কোন কারণ আছে নিশ্চয়। আলোচনা শুরু হবার আগে নিজের মনটাকেই হয়তো গুছিয়ে নিচ্ছেন মা, হৃদয়কে শান্ত ও আয়ত্তাধীনে রাখবার আয়োজন করছেন। তাড়াহুড়ো করে কথা পেড়ে কোন লাভ হবে না। জয়ন্ত ঘুমিয়ে পড়ে আগে। পরে রামাও কয়েকবার হাই তুলে বিছানয়ে গিয়ে আশ্ৰয় নেয়। খাওয়ার পাট চুকেছিল হেমন্ত বাড়ি ফেরার কিছু পরেই। তখন অনুরূপ কথা পাড়েন ।