পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

80 মানিক গ্ৰন্থাবলী “আমায় আটকে দিয়েছিল হাসপাতালে। তোমায় দেখতে কেমন করতে লাগল মনটা। চুপি চুপি পালিয়ে এসেছি।” “আঁ ? ডাক্তার বলেছিল শুয়ে থাকতে, চুপি চুপি তুই পালিয়ে এসেছিস এই রাতে এক মাইল পথ হেঁটে ? “তোমার একটু আদর না পেলে কি এ যন্ত্রণা সয় ?’, রসুল বুঝতে পারে, মা নিঃশব্দে কঁদছেন। বেশী রক্ত বেরিয়ে যাবার ফলে একদিকে যেমন দুর্বল অশক্ত মনে হচ্ছে শরীরটা, তেমনি আবার কেমন অদ্ভুত রকমের ভৌত অবসন্নটা এসেছে অনুভূতিতে। আমিনার কান্না যে অগাধ ও অসহনীয় বিষাদে হৃদয় ভরে দেয়, রসুল জানে সেটা সাময়িক ও কৃত্ৰিম । রক্তক্ষরণের ফলের শুধু এই প্রতিক্রিয়া এসেছে। নইলে এত রাত্রে এসে মাকে কঁদাতে তার মোটে ভাল লাগত না, এলেও কঁদাবার বদলে নিজেই সে হৈ-চৈ হাঙ্গামায় অস্থির করে ভুলিয়ে রাখত মাকে। কিন্তু আজ এমন দুর্বল হয়ে গেছে মনটা যে মাকে আরও বেশী কঁাদিয়ে দুঃখটা উপভোগ করতে ইচ্ছা হচ্ছে। ডাক্তার সত্যি বলেছিল যে, রক্তক্ষয়ের কতগুলি অদ্ভুত খাপছাড়া প্রতিক্তিয়া আছে - নিজেকে হঠাৎ অতিরিক্ত সবল মনে করে সে যেন বিছানা ছেড়ে ওঠবার চেষ্টা না করে। তাই সে করেছে। শেষ পর্যন্ত ! বেড ছেড়ে উঠে এক মাইল রাস্তা হেঁটে মাকে কঁদাতে এসেছে। দাতে দাত ঘষে রসুল মনে মনে বলে, “না, বিকারের ঝোকে মাকে সে কঁাদাতে আসেনি, ভেবে-চিন্তে যা করেছে সে কাজকে ওই সস্তা দুর্বলতায় পরিণত হতে সে দেবে না, রক্ত ক্ষয় হবার জন্য তো নয় শুধু গ্রেপ্তার হওয়ার জন্যও বটে। হাসপাতালে গ্রেপ্তার না হলে কি তার মাকে এ ভাবে দেখতে আসবার ঝোক চাপত! আবার কবে দেখা হয়, যার মনে একটু শান্তি ও শক্তি দেবার চেষ্টা করা তার উচিত, এসব হিসাব করেই সে এসেছে মাকে দেখতে। মাকে কঁাদিয়ে খুন্সী হয়ে যেতে নয় । “তবে তুমি কঁদো, আমি যাই।” “কঁদেছি কই ।” "এবার যে কথা বলব শুনে কিন্তু ভেউ-ভেউ করে কঁদবে।’ ‘ইস “না সত্যি। হাঙ্গামার কথা। সেই জন্য তো রাত দুপুৱা পালিয়ে এলাম CVR CeV5 o