পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

N 8 R মানিক গ্ৰন্থাবলী শিশুর মতো কেন রসুল এমন পাগল হয়ে উঠল মায়ের জন্য ? আর দশটি শান্ত-শিষ্ট ভাল ছেলের মতো হয়ে না থেকে এই সব বিপজ্জনক আজাদির ব্যাপারে যোগ দিয়ে দুঃখিনী মাকে আরও দুঃখ দিচ্ছে, এ রকম কোন কঁাটা কি আছে। ওর মনে তিনি তো কোন দিন সমালোচনা করেন নি, আপসোস জানান নি। ও-রকম নিরীহ গোবেচারা ছেলেই বা ক’জন আছে দেশে যে, তাদের সঙ্গে তুলনায় দেশের ও দশের জন্য নিজের মাকে কষ্ট দেবার চেতনা ওর লেগেছে। আমিনার তো মনে হয় দেশের সব ছেলেই তার রসুলের মতো - অন্য কোন পথ তাদের নেই। আচ্ছন্ন অভিভূতের মতো রসুল ঘুমিয়ে থাকে, মাঝে মাঝে তার মুখ দিয়ে অস্ফুট কাতর শব্দ বার হয়। আমিনা জেগে বসে চুপ করে চেয়ে থাকেন তার রক্তহীন বিবৰ্ণ মুখের দিকে। তার অশ্রহীন দুটি আরক্তিম চােখে শুধু ইঙ্গিত ফুটে থাকে হৃদয় তার কি ভাবে রক্তাক্ত হয়ে আছে । শেষ রাত্রে আবদুল ঘরে ঢোকে। ‘এবার যেতে হবে রসুল । ‘হেঁটে ফিরতে পারবে ? আমিনা বলেন। “না, হাটতে হবে না । গাড়ির ব্যবস্থা করেছি।” আবদুলেরও ঘুম হয়নি, তার চোখ দুটিও টকটকে লাল হয়ে উঠেছে। সে চোখের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে ঘুমন্ত শহরের শেষ রাত্রির স্তব্ধতা যেন প্রশ্ন হয়ে ওঠে। আমিনার কাছে : তোর কি শুধু একটি ছেলে ? কে নিজের ছেলে কে পরের ছেলে ভাববার ক্ষমতা নিজের ছেলেই তার লোপ পাইয়ে এনেছে ক্ৰমে ক্ৰমে । অজানা অচেনা অসংখ্য ছেলে তার রসুলের সঙ্গে আহত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তার বুকের মধ্যে। আর এমন এক বন্ধুকে সঙ্গে এনেছে রাসুল, দু’দণ্ড যার মুখখানা দেখে মনে হচ্ছে, রসুলের মতোই সে তার চেনা-জানা, নিজের বুকের রক্ত ঢেলে মানুষ-করা সন্তান । স্বধাই বাইরের দরজা খুলে দেয় প্রতি রাতের মতো। মুখ খুলে ব্যথিত ভৎসনার দৃষ্টিতে আজ আর তাকায় না। অন্য দিনের মতো, পাশে সরে দাড়িয়ে পথ ছেড়ে দিয়ে মাথা হেঁট করে থাকে । অক্ষয় উৎফুল্প কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “যুমিয়ে পড়েছে সবাই?” “কি জানি। চেঁচামেচি জুড়ে না।” “তোমার হল কি ?”