পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਨੇ Σ Σ চুরির সামিল পাপ-ধান না দিলে ফৌজদারীতে একেবারে জেল! ধান যদি নেই, হিসাব মত বাজার দরে পাওনা ধানের দামটা দিয়ে দাও । চাষীর হাতে টাকা এসেছে ঢের । যাই বাড়ুক তার খাজনা বাড়ে নি। সবাই ভাবিছে, এতদিনে চাষীই এবার সুখী, খাজনা দেবার খরচটা সে টেরও পাবে না । কিন্তু বাধা খাজনার বঁাধন অটুট রেখে জমিদার যে চাষীর লাভে ভাগ বসাতে পারে এ হিসাবটা সবার ফস্কে গেছে। আইন রেখে আইন ভাঙ্গার পেশায় যিনি মেডেল-যোগ্য গুণী, তিনি যেন প্ৰজারই ধনলাভে খুশী হয়ে ঘুমোতে পারবেন। জমিদারও খাজনা চাইলে,—ধান। ভুলানো নয়, ঠকানো নয়, টাকার বদলে ধান। আগের চেয়ে দাম বেড়েছে ধানের ? বেশ, আগের চেয়ে একেবারে একটাকা বেশী ধরে। জমিদার যে অবুঝ তাও নয়। ধান যার নেই। সে টাকায় খাজনা দিক, কি আর করা যাবে । ধান যার কম আছে সে টাকায় আর ধানে দিক, কি আর উপায় আছে। ধান যার আছে তার ভাবনা কি, ধানেই খাজনা শোধ । ধানের তাই বড় অভাব ঘরে ঘরে, বীজধানেরও চমকপ্ৰদ। অভাব। সদরে বীজ ধান দেওয়া হচ্ছে। গৌরাঙ্গ, রঘু আর সদয় সামন্ত সদরে গোল বীজধান কিনতে । তিনজনই চাষা কিনা, বীজধান দেখে তাই তিনজনেরি সে কি জবর হাসি । দম নিয়ে গৌরাঙ্গ বলল, “যে ধান গাছে তক্ত হয়, এতে সেই গাছ হবে।” চাপরাসী কান ধরে তাদের বার করে দিল । অনেকেৱই বীজধান ছিল না, তবু দেখা গেল শেষ পর্যন্ত আবাদের জন্য তৈরী সমস্ত জমির জন্য যত বীজধান দরকার ছিল যোগাড় হয়ে গেছে। বীজধানের জন্য সামান্য যা কিছু ছিল বাধা পডল, ঋণের বোঝা বেড়ে গেল, যারা কিনল বীজধান। — জমির আগামী ফসলের মোটা অংশই মহাজনের কবলগত হয়ে গেল অনেকের । সরকারী কৃষি বিভাগের লোভ, লাভ ও অব্যবস্থার স্তর থেকে মহাজনের ঘর থেকে বীজধান নেমে এল আগামী দুর্দশার বীজ হয়ে চাষীদের ঘরে । অন্য সমস্ত কিছুই যেমন যার যত দরকার তার তত জোটে না,- কয়েকজন পায় অনেক, তার চেয়ে বেশী কয়েকজন পায় যথেষ্ট এবং অধিকাংশই পায় কম - প্ৰাণপাত সংগ্ৰহ প্ৰচেষ্টার ফলে চাষীদের বীজধানও ঘরে এল সেই নিয়মে । বুড়ো হারাণের সাত বিঘে জমি, তার চার বিঘেতে বীজ ছড়ানো চলবে, তিন বিঘে বঁাজ হয়ে থাকবে উর্বরা বিধবা মেয়ের মত। হাৱাণ করে কি, তিনুর কাছে