পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিহ্ন Σ' 8) ‘সত্যি খাওনি তো তুমি ? ‘সত্যি খাইনি।” মুখের চেহারা বদলিয়ে সুধা তার দিকে চেয়ে থাকে। এতক্ষণে বিশ্বাস করেও সে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তার এত বড় সৌভাগ্য কি করে সম্ভব! “একদিন না খেলে কি হয় ?” ‘ऊ छेिक । সহজ ভাবেই সায় দেয় অক্ষয় । তার অভিমানও হয় না, রাগও হয় না । একদিন সে প্ৰতিজ্ঞা ভঙ্গ করলে সুধা সেটা সহ করে এই জন্য যে, একদিন প্ৰতিজ্ঞ । ভঙ্গ করা চরম নয়, শেষ পর্যন্ত প্ৰতিজ্ঞাটা রাখাই আসল কথা । এটা অক্ষয় আজ জেনেছিল খানিক আগে । তাই একদিন আজ সে মদ খায়নি এটা যে অসাধারণ ব্যাপার কিছু নয়, কাল পরশু। তরস্তু যদি না খেয়ে থাকতে পারে তবেই জানা যাবে সে সত্য সত্যই জয়ী হয়েছে, সুধার এই ইঙ্গিত তাকে ক্ষুন্ন করে না । সুধা ঠিক কথাই বলেছে। কেউ ঠিক কথা বললে খুলী না হওয়া বোকামি। বোকামিকে প্রশ্ৰয় দিতে আজ রাত্রে অন্তত অক্ষয় একেবারেই রাজী নয়। মাকে প্ৰণাম করার বোকাটাও তার কেটে গেছে। এমন এক জায়গায় উঠে গিয়েছিল তার মনটা সেখানে কোন মনেরই বাস্তব আশ্রয় নেই, সুধার কল্যাণে সেখান থেকে নেমে এসে সে এখন বুঝতে পারছে সে মদ খেয়ে আসে নি বলে রাত দুপুরে মাকে ঘুম থেকে তুলে প্ৰণাম করতে গেলে সে পাগলামিকে লোকে চেনা মাতালের মাতলামিই মনে করবে। অনেক দিন পরে এমন সাদাসিদে সহজ কথা সাদাসিদে সহজ ভাবে ভাবতে বড ভাল লাগে তার। যদিও রোগের অস্বস্তি, সব কিছু থেকে বঞ্চিত হবার সব কিছু ফুরিয়ে যাবার উৎকট অনুভূতি, মনকে খিাচে রাখা পুঞ্জ পুঞ্জ অন্ধ আতঙ্ক সে মাথা কপাল খুড়লেও আজ রাত্রে এক চুমুক পাওয়া যাবে না, এসব পুরো মাত্রায় বজায় আছে। গাঢ় নীল বৈদ্যুতিক আলোয় লেখা ‘বিদ্যুৎ লিমিটেড সাইনটা বহু দূর থেকে চোখে পড়ে। প্ৰকাণ্ড চওড়া নতুন রাজপথ, দু’দিকে বিরাট অট্টালিকা, মোড় থেকে যত দূর চােখ যায় সিধা চলে গেছে। শহরের উন্নতির আধুনিক চিহ্ন। আঁকা-বঁকা নোংরা গলি আর বন্তিগুলিকে অট্টালিকার পিছনে আড়াল করে রেখে শহরে যে বড়লোকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে তার এই সব প্ৰমাণ-সৃষ্টির পরিকল্পনা যুদ্ধের