পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R মানিক গ্ৰন্থাবলী “কোথায় গেছে, এখুনি আসবে। এতে আবার শাসন কিসের ? “তুই কিছু বুবিস না হেমা । এমনি না বলে একটু এদিক ওদিক যায়, সে আলাদা কথা । ছোট ছেলে আমন করেই। কাল হৈচৈ করতে যেতে চাইছিল, আমি যেতে দিইনি। সকাল হতে না হতে তাই ইচ্ছে করে কিছু না জানিয়ে চুপি চুপি পালিয়েছে।” “বেশী আটকালে এ রকম হয় । পাড়ার সব ছেলে রাস্তায় বেরিয়েছে, খোকা বন্দী হয়ে থাকবে ?” “বলে যেতে পারত।” ‘কেন বলেনি জানো ? যদি মানা কর এই ভয়ে। তা হলে তো তুমি আরও বেশী রাগ করতে, মানা করলাম, তবু চলে গেল! তোমার মনে কষ্ট দিতে চায়নি খোকা, বুঝতে পারছি না ? আমারও তো ভয় হচ্ছিল কাল, তুমি যদি বারণ কর, কি করে তোমার মনে কষ্ট দেব ।” ‘বুঝেছি। কোন কথা শুনবে না ঠিক করাই থাকে তোমাদের, আমার সঙ্গে শুধু একটু ভদ্রতা কর।” “মার সঙ্গে অভদ্রতা করতে হয় না কি ?” হেমন্ত হাসে । অনুরূপাও এতক্ষণে খানিকটা ধাতস্থ হয়েছেন মনে হয়। “যাকগে, যা খুন্সী কর । আমি তো এবার পেন্সন নেব সংসার থেকে । তোমাদের ঘাড়েই চাপবে ভাই-বোনের ভার। “তোমাদের ? তোমাদের কে কে মা ? ও । আমি আর তোমার ছেলের বোঁ। তুমি এত হিসেব জানো মা ? কত দিন এ ভাবে এড়িয়ে যাওয়া চলবে, ঠেকিয়ে রাখা যাবে ? হেমন্ত ভাবে পথে নেমে । এই তো সবে সুচনা, শেষ পর্যন্ত কোথায় গড়াবে এই মায়ার লড়াই কে জানো! অথবা ক্ৰমে ক্ৰমে ঠিক হয়ে যাবে সব, সময় পেলে সম্ভব হবে মানিয়ে নেওয়া, শান্তি পাওয়া মারি পক্ষে - তার পক্ষেও ? বুঝে উঠতে পারে না হেমন্ত । পরিবেশ গড়ে মানুষকে, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলাই সহজ মানুষের পক্ষে, অতি দরকারী লড়াইও এড়িয়ে চলতে মানুষ তাই এত ব্যাকুল, পলাতক মনোভাব তাই এত প্ৰবল। পালিয়ে পালিয়ে এড়িয়ে চলার দিন তার পক্ষে ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু কি করতে হবে তাকে আগামী দিনগুলিতে, ঠিকমতো তার জানা নেই। বিশেষ অবস্থায় আজকের দু’চার দশ দিনের বিশেষ কর্তব্য হয়তো তার জানা আছে, কিন্তু তারপর যখন দৈনন্দিন জীবনকে গড়তে হবে নতুন করে