পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ठिळुांत्रिं S দরকারও হয় না। যে বয়সে বিরজা যতখানি বিয়ের যুগ্যি হয়েছিল তার চেয়ে চার বছর বেশী বয়সেও দুৰ্গা সে যোগ্যতা পায়নি। আকারে বিরজা দুর্গার চেয়ে অনেক বড়, লম্বায়, চওড়ায়, মাংসের সংস্থানে। ছোটখাটো বেঁটে আর রোগ প্যাটিকা চেহারা দুৰ্গার । অনেক চেষ্টায় দেড়মাস জীইয়ে রাখবার মত একটা খুদে ছেলে বিয়োবার পরেও তার বিয়ের সময়কার চেহারা বিশেষ বদলায় নি, শুধু মুখখানা একটু প্যােঙাসে মেরে গেছে, উপোসীর মত। বিরজার ছেলেমেয়ে হয়েছে মোট সাতটি, তার মধ্যে তিনটি বেঁচে নেই। বিরজার এই বাড়াবাড়ির জন্যই দুর্গাকে রঘুর বিয়ে করা, ঘন ঘন দীর্ঘকালের জন্য শূন্য শয্যার ফাঁকা অসম্পূর্ণ জীবন তার সয়নি। নইলে বিরজার জন্যই চিরদিন তার দরদ বেশী । বিরাজা তার প্রথম বয়সের সোহাগিনী, তার ছেলেমেয়ের মা, তার সঙ্গে কি অন্য কারো তুলনা হয়! আজিও সেই তার সব, বাড়তি একটা বৌ ছাড়া দুৰ্গা আর কিছুই নয়। ঈর্ষায় আতঙ্কে বিরজা প্ৰথমে ক্ষেপে গিয়েছিল। তারস্বরে ঘোষণা করেছিল যে সতীনকে মেরে নিজে সে বিষ খেয়ে মরে যাবে, তারপর রঘু যেন আবার বিয়ে করে, দশটা বিশটা বিয়ে করে, বিয়ের সাধ মেটায়, সে কিছু বলতে আসবে না। দুর্গাকে দেখে, রঘুর মন বুঝে, নিজের যা কিছু ছিল সব বজায় আছে এবং থাকবে জেনে, শেষে বিরজা শান্ত হয়েছিল । তার মনে আর কোন ক্ষোভ থাকে নি। তাকে ছেড়ে তাকে ভুলে ছেলে তার খেলার পুতুল নিয়ে মেতেছে দেখলে তার যেমন স্নেহার্ড প্রশ্ৰয় জাগে, রঘুর আবার বিয়ে করাকেও সে তেমনি তার জীবন্ত পুতুল নিয়ে খেলা করার ছেলেমানুষী বলে গ্ৰহণ করেছে। চারদিক বিবেচনা করে মনে মনে বরং একটু খুশীই হয়েছে বিরজা, স্বস্তি বোধ করেছে। পুরুষ মানুষের আলগা সখের জন্য এই ব্যবস্থাই মন্দের ভাল। স্বভাব বিগড়ে পুরুষ • সংসারধর্মে উদাসীন হলে বড় বিপদ ঘটে, তার চেয়ে এ অনেক ভাল। আর যাই হােক, ঘরমুখো মানুষ এতে ঘরমুখোই থাকে। দুর্গাকে বিরজা শাসন করে, কেটে ছোট তার অধিকার খর্ব করে রাখে। কিন্তু তেমন কিছু অত্যাচার করে না। রঘুর পক্ষপাতিত্বই দুৰ্গাকে সতীনের অত্যাচার থেকে বঁচিয়েছে। বিরজা যাই করুক তাকেই রঘু চিরদিন সমর্থন করেছে, কখনো ভুলেও দুর্গার পক্ষ নেয়নি। দুর্গাকে বেশী কষ্ট দেবার তাগিদও বিরাজ তাই কখনো অনুভব করেনি। দুৰ্গাঁও বিরজার মন যুগিয়ে চলে, তার হুকুমে ওঠে বসে। ভারি ভারি কাজ