পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sar মানিক গ্ৰন্থাবলী বিষ্ণুপ অবাক হইয়া দু’জনকে দেখিতে থাকে। একজন অনায়াসে মিথ্যাকথাটা বলিয়া ফেলিল; পূজো দিতে গিয়া আপিস পৌছতে দেরি করার জন্য বিরক্ত হইলে পাছে অপরাধ হয়, এই ভয়ে আর একজনের বিরক্তি সঙ্গে সঙ্গে উপিয়া গেল। দু’জন সমবয়সী নিরীহ গোবেচারী মানুষ, জীবনটাও হয়তো দু’জনের একই ছাচে ঢালা— পরীক্ষা পাস, চাকরী ও সংসার - কিন্তু একজন মন্দিরের নামে মিথ্যা বলিতে ভয় পায় না, আর একজন মন্দিরের নাম শুনিলেই ভড়কাইয়া যায়। আপিস ক্ৰিষ্টপের অপরিচিত নয়, আগে মাঝে মাঝে দরকার পড়িলে বাপের সঙ্গে দেখা করিতে আসিয়াছে; চাকরী হওয়ার সময়ে বিনা দরকারেই ঘনঘন অনেকবার আসিয়াছে। অনেকের সঙ্গেই তার চেনা ছিল, অবিনাশ আরও কয়েক জনের সঙ্গে আলাপ করাইয়া দিলেন - প্ৰত্যেকের ভদ্রতা ও শুভ কামনার জবাবে সবিনয়ে বলিতে লাগিলেন, “আপনার দয়া ।” বাড়ী ফিরিবার সময়ে ট্রামে ও ট্রেনে অবিনাশ ছেলেকে অনেক রকম উপদেশ দিলেন, আপিসে কোন লোকটা ভাল আর কোন লোকটা বজাত মুখে মুখেই তার লম্বা তালিকা শুনাইয়া দিলেন ; কার সঙ্গে কি রকম ব্যবহার করিতে হইবে তাও বুঝাইয়া দিলেন।

  • - আস্তে আস্তে ডিপ্লোমেসী শিখতে হবে, নইলে উন্নতির কোন আশা নেই বাপু ! দেরী করার জন্য পদ্মলোচন চটে ছিল, দেখলি তো কেমন সামলে নিলাম ? -অবিনাশ সগর্বে ছেলের মুখের দিকে তাকালেন- ‘অন্য কেউ হলে কেঁউ কেউ করত, ব্যাটা আরও চটে যেত, আমি তো জানি কত ধানে কত চাল, এমন কৈফিয়ৎ দিলাম যে আর টু-শব্দটি করতে পারল না।!-- একটু থামিয়া উপসংহার করিলেন, তবে লোকটা সত্যি ধামিক। মন্দির দেখলেই আধঘণ্টা ধরে। প্ৰণাম

করে ।” ক্রিটুপ বলিল, “আর প্রার্থনা করে, আমার মাইনে বাড়ুক ?” অবিনাশ আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, “সে তো সবাই করে ।” বিধুর চায়ের দোকানে মণীশ বসিয়াছিল। সুৰ্য চোখের আড়ালে চলিয়া গিয়াছে; কিন্তু তখনও সন্ধ্যা হয় নাই। এত আগে মণীশ কখনও বিধুর চায়ের দোকানে আসে না । ত্ৰিষ্টুপ বলিল, “তুমি এগোও বাবা, আমি আসছি।” চায়ের দোকানে ঢুকিতে যাইতেছে দেখিয়া অবিনাশ শঙ্কিত হইয়া বলিলেন, “খালি পেটে চা খেও না। তিষ্ট।’