পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ΣΟ. মানিক গ্ৰন্থাবলী অনেক দিনের পুরানো খাটের বিছানার চাদরটা ময়লা। নূতন সোফা-টেবিলে জমকালো বাহিরের ঘর পার হইয়া বাড়ীর ভিতরের গরীবানা অপরিচ্ছন্ন চেহারা দেখিয়াই ত্ৰিষ্টপ একটু অবাক হইয়া গিয়াছিল, মণীশের নিজের ঘর দেখিয়া সে একেবারে থ বানিয়া গেল । 瞩 তাকে বসিতে বলিয়াই মণীশ বাহির হইয়া গিয়াছিল একটু পরেই সে ফিরিয়া আসিল। আরও খানিকক্ষণ পরে দু'হাতে দুটি থালায় লুচি আর তরকারি নিয়া একটি মেয়ে ঘরে আসিল । মেয়েটিকে ব্রিষ্টপ কলকাতায় বাসন মাজিতে দেখিয়াছিল। দুই মণীশের বোনের নাম কুন্তলা । বিবাহ-দেওয়া-দরকার বয়স হইয়াছে - দু-এক বছর বেশীই হইয়াছে। এই বয়সে সময় হিসাবে দু-এক বছর যে কত দীর্ঘ আর অ-তুচ্ছ কে তা না জানে ? দাদা যে ক্রিষ্টপকে বাড়ীতে ডাকিয়া আনিয়াছে কেন সেটুকু বুঝিবার মত আর বুঝিয়া যে জোরালো লজ্জা সর্বাঙ্গ আড়ষ্ট করিয়া দিতে চায়, সেটা জোর করিয়া লুকাইয়া রাখার চেষ্টা করার মত জ্ঞান বুদ্ধি অভিজ্ঞতা কুন্তলার জন্মিয়াছে। প্রথমটা তাই ত্ৰিষ্টপের মনে হইয়াছিল, মেয়েটা বুঝি একটু পাকা। তারপর দু-চার দিনেই এ ভুলধারণা তার ঘুচিয়া গিয়াছে। কুন্তলার চাল-চলন কথা-বার্তায় যেটুকু অস্বাভাবিকতা ধরা পড়িয়াছিল, এখনও কিছু কিছু ধরা পড়ে, সাধারণ গৃহস্থ সংসারের এই বয়সের দেয়াল-চাপা ভীরু মেয়ের পক্ষে ওটুকু অস্বাভিকতাই স্বাভাবিক। তৃতীয়বার কুন্তলা যখন খাবারের থালা হাতে সামনে আসিয়া দাড়াইয়াছিল, তখন ত্ৰিষ্টপের খেয়াল হইয়াছিল যে বেচারী জানে, তাকে পছন্দ করাইতে পারিলে সে তাকে বিবাহ করিলেও করিতে পারে। পঞ্চম বার মণীশের বাড়ীতে গেলে কুন্তলা যখন চলনসই কঁপা গলায় রবিবাবুর একটি গান শুনাইয়াছিল তখন খ্রিষ্টপের আরেকটা বিষয় খেয়াল হইয়াছিল; তার মন ভুলানোর চেষ্টার মত কিছু পাছে বলিয়া বা করিয়া বসে এই ভয়ে কুন্তলা বড়ই কাবু হইয়া গিয়াছে।