পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদায়ের ইতিহাস Sa Q কুন্তলার দিদি রমলাকে দেখিয়া ত্ৰিষ্টুপ আশ্চর্য হইয়া গেল। কুন্তলার চেয়ে সে বয়সে চার পাঁচ বছরের বড়, সাত বছর আগে তার বিবাহ হইয়াছে এবং মেয়ে হইয়াছে দুটি ; তবু প্ৰথমবার তার দিকে তাকাইয়া ত্ৰিষ্টপের মনে হইয়াছিল, কুন্তলাই বুঝি শাড়ী গয়না পরিয়া সিথিতে সিন্দুর দিয়া বৌ সাজিয়াছে। যমজ না হইয়াও যে দুটি বােনের চেহারায় এত মিল থাকিতে পারে, ত্রিষ্টপ কোন দিন কল্পনাও করিতে পারে নাই। কেবল বাহিরের নয়, দুজনের ভিতরের মিলটাও যে বিস্ময়কর, প্ৰথমে ত্রিভুপের কাছে তা ধরা পড়ে নাই। কুন্তলা ভীরু লাজুক নম্র ; রমলা হাঁসি-খুসী, মিশুক, কথা বলিতে পঢ়। সাত বছরের বিবাহিত জীবন অধিকাংশ মেয়েকেই ভেঁাতা। করিয়া দেয়, রমলার বেলা ফলটা হইয়াছে যেন ঠিক তার উলটা। তার অনুভূতি তীক্ষ্ম হইয়াছে, জীবনীশক্তি বাড়িয়াছে, আনন্দ আহরণের ক্ষমতা বাড়িয়াছে। স্মৃতি আর উৎসাহের জন্য যেন বিশেষ উপলক্ষ্য দরকার হয় না , জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে উৎসবের প্রেরণা যেন সঞ্চিত আছে, চয়ন করিয়া নিলেই হয়। তারপর ক্ৰমে ক্ৰমে দুজনের এতখানি পার্থক্য সত্ত্বেও মিলট ত্ৰিষ্টপের কাছে স্পষ্ট হইয়া উঠিতে লাগিল। সে বুঝিতে পারিল, কুন্তলার সঙ্গে রমলার শুধু বিকাশের পার্থক্য-কিশোরীর সঙ্গে যুবতীর। যে কথায় কুন্তলার মুখে মৃদু হাসি ফুটিতেছে, সেই কথাতেই রমলা হাসিয়া উঠিতেছে উচ্ছসিত ভাবে, যে মমতায় কুন্তলা কচি মেয়েটাকে কোলে নিয়া সন্তৰ্পণে তার গালে চুমা দিয়া বলিতেছে, কেঁদো না, সেই মমতাতেই রমলা বড় মেয়েটাকে বুকে চাপিয়া দলিয়া মলিয়া তাকে বুকের সঙ্গে যেন মিশাইয়া দিতে চাহিয়া বলিতেছে, “কঁদে না যাদু, মামা বাড়ী এসে কি কঁদতে আছে রে দুষ্ট পাজী সোনা ?” যে সুখ দুঃখের হিসাব কুন্তলা ভবিষ্যতের কল্পনায় জমা রাখিয়া ভাবিতেছে, কে জানে আমার কপালে কি আছে, সেই সুখ-দুঃখের স্বাদ নিতে নিতে রমলা ভাবিতেছে কে জানে আমার কপালে এত সুখ টিকিবে কিনা ! রমলা সত্য नऊशे মুখী । কেবল নিজে সে সুখী হয় নাই, আরেক জনকেও সুখী করিয়াছে। রামলার স্বামী ধীরেনের শান্ত, পরিতৃপ্ত আনন্দোজ্জল মুখের দিকে চাহিয়া ক্রুিপের হঠাৎ এক সময় মনে হয় জীবনের হিসাব নিকাশের অঙ্ক-শাস্তুটাই কি তবে তার ভুল ? তিরাশী টাকার একজন কেরাণী এমন সুখী হইল কি করিয়া ?