পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R O o মানিক গ্ৰন্থাবলী রামলা বলিল, “আপনি এক দিন আসবেন জানতাম।” “কি করে জানতেন ? “অনেকে বলে যায়, কিন্তু আসে না । দু’চার মাস পরে দেখা হলে বলে, সময় পাইনি, বড ব্যস্ত ছিলাম, এবার একদিন নিশ্চয় যাব। আপনি তাদের মত নন। সেদিন কথা বলেই বুঝতে পেরেছিলাম।” ছোট মেয়েটিকে কোলে করিয়া রমলা বসিয়াছে, বড় মেয়েটি চেয়ার ঘোঁসিয়া মার পিঠে এক হাত রাখিয়া শান্ত কৌতুহলের দৃষ্টিতে চাহিয়া আছে। রমলার ভাব দেখিলে সত্যই মনে হয়, ত্ৰিষ্টপ আজ ঠিক এইসময়ে আসিবে জানিয়া নিশ্চিন্তু মনে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য আগে হইতেই সব কাজ, সব হাঙ্গামা চুকাইয়া” রাখিয়াছে। অন্য সমস্ত বিষয়ের চিন্তা সে এখনকার মত মনের একপাশে সরাইয়া দিয়াছে, তার সবটুকু মনোযোগ এখন অভ্যাগতের প্রাপ্য। সংসারের কোন কাজ, কোন দায়িত্ব যাদের নাই, বাড়ীতে কেউ আসলে তাদেরও ক্রিষ্টপ এমন স্থির শান্ত একাগ্রভাবে কখনও এক মিনিট আলাপ করিতে দেখে নাই, প্ৰতি মুহুর্তে বুমলা যেন তার আত্মমৰ্যাদা বাড়াইয়া দিতে থাকে। একজনের প্রথম বাড়ীতে আসার অপরিহার্য অস্বস্তি ও সঙ্কোচ আপনা হইতে যেন কোথায় মিলাইয়া खाष्ट्र । আজ খ্রিষ্টপ প্ৰথম বুঝিতে পারে — অন্যে তুচ্ছ করিলে নিজের কাছে মানুষ কি ভাবে তুচ্ছ হইয়া যায়, অন্যে দাম দিলে কিভাবে দাম বাডে। জীবনকে রমলা শ্ৰদ্ধা করে । ধনীকে নয়, মানীকে নয়, গুণীকে নয়, জীবনের প্রতীক মানুষকে সে সম্মানের অর্ঘ্য দিয়া পূজা করে। তার কাছে থাকিলে ব্যর্থতার ক্ষোভ মানুষের তুচ্ছ হইয়া যায়। কারণ, কিছু না বলিয়াও সে যেন ক্ৰমাগত বলিতে থাকে, ব্যর্থতা ও সার্থকতার চেয়ে মানুষ অনেক বড়, যে অবস্থায় জীবন যাপন করুক, মানুষ চিরनिश् भांश् । রাত প্ৰায় আটটার সময়ে ত্ৰিষ্টপ বিদায় নিল। পথে এবং বাড়ী ফিরিয়া রাত্রে ঘুম আসা পর্যন্ত এই নূতন অভিজ্ঞতাই সে মনে মনে নাড়াচাড়া করিতে লাগিল । তিরাশী টাকার এক কেরাণীর জীবন রমলা সুখে ও শান্তিতে ভরিয়া দিয়াছে। অপূর্ণতা তাকে পীড়ন করে না, রমলা তার আত্মগ্লানি জাগিতে দেয় না। দুঃখের ছোয়াচ লাগিলে রমলা তাতে নিজের আনন্দে প্ৰলেপ লাগাইয়া দেয়। এক বিষয়ে হতাশা জাগিলে অনেক বিষয়ে আশা জাগাইয়া রমলা তাকে সঞ্জীবিত করে। যা আছে, তারই সন্তোষে মন ভরিয়া রাখিয়া, বঁচিবার প্রয়োজনে মাসে মাসে