পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So মানিক গ্ৰন্থাবলী আপিসের কয়েক জনের সঙ্গে খ্রিষ্টীপের একটু একটু ঘনিষ্ঠ পরিচয় হইয়াছে। “মুগ্ধবোধ নকল করছেন নাকি মুগ্ধ হয়ে ? ক্রিষ্টপ মুখ তুলিয়া একটু হাসে। টেবিলের অপর দিকে তার মুখোমুখি বসে সত্যেন। বয়স ক্রিস্টুপের চেয়ে বেশী নয়- অভিজ্ঞতা বেশী। বছর তিনেক কাজ করিতেছে। একমাথা কেঁকড়া চুলে তার সাধারণ চেহারাটিকে একটু অসাধারণ করিয়া তুলিয়াছে। কিন্তু ত্ৰিষ্টপের মনে হয়- তার চুলগুলি হঠাৎ ওরকম অসাধারণ হইয়া গেলে লজ্জায় সে কারো কাছে মুখ দেখাইতে পারিবে না। ‘হু হু বাবা, মোহমুদগরের গুতো তো লাগেনি, টের পাবেন!’ । ডান পাশে বসে নিকুঞ্জ। বেঁটে, মােটা, মাঝবয়সী, ধীর স্থির মানুষ, ছোট ছোট চোখ দুটি কেবল সর্বদা পিট পিট করে। সে নাকি নূতন বিবাহ করিয়াছে, দ্বিতীয়বার আধ্যময়লা জামাকাপড পরিয়াই কিন্তু সে আপিসে আসে, কেবল তেলে ভেজা চুলে সযত্নে টেরি-কাটা আর কামানো মুখে স্নো পাউডার লাগানো ছাড়া তার আর কোন বাহার নাই। মাথার সুগন্ধি তেলের গন্ধটা সর্বদাই ক্রিস্টুপের নাকে লাগে। “অত স্পীডে কাজ করবেন না মশায়, মারা যাবেন শেষে।। যত শীগগির শেষ করে দেবেন, তত কাজ ঘাড়ে চাপাবে। এক দিম থই পাবেন না ।” টাইপিস্ট ধীরেন। একটি ফুলস্ক্যাপ শীটে কয়েক লাইন টাইপ করিয়া টাইপরাইটার যন্ত্রের চাবীগুলিতে হাত রাখিয়া চুপ করিয়া বসিয়া আছে। মাঝে মাঝে চাবিগুলিতে বিদ্যুৎ বেগে তার আঙ্গুলের সঞ্চালন ক্রিষ্টপ বিস্মিত দৃষ্টিতে চাহিয়া দেখিয়াছে। কিন্তু ধীরেন একটানা আঙ্গুল চালায় না, মিনিট দুই-তিন টাইপ করিয়া আট-দশ মিনিট বসিয়া থাকে, গল্প করে আর ইয়ার্কি দেয়। মাঝে মাঝে দশ বিশ মিনিট দ্রুত একটানা টাইপ করিয়া হাতের কাজ শেষ করিয়া, কাগজগুলি ঘণ্টাখানেক ফেলিয়া রাখে, তারপর ধীরে সুস্থে কর্তাদের কাছে পঠাইয়া দেয়। মন্থর গতিতে সে টাইপ করিতে পারে না, আঙ্গুল বাগ মানে না। তিন মাসের মধ্যে আপিস একঘেয়ে হইয়া উঠিল। এমনিভাবে এক একটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে নূতন নূতন মানুষের পরিচয় পাইয়া অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য তাদের সকরুণ অন্তহীন লড়াই দেখিয়া নিজের জীবনে বৈচিত্ৰ্য আসার আনন্দ ও উৎসাহ ক্রিটুপি অনুভব করিতে লাগিল । , বড় কিছু না হোক, এ ছোট কাজই বা মন্দ কি ? এ কাজেও তো মানুষ মাসগুলি হইয়া যাইতে পারে।