পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদায়ের ইতিহাস RS ত্ৰিষ্টপের শান্ত নির্বিকার, আত্মপ্ৰতিষ্ঠ ভারটা তার কাছে এতক্ষণে ধরা পড়িয়াছে। নিজের সঙ্গেই যেন কথা বলিতেছে এমনিভাবে খ্রিষ্টপ তারপর বলিতে থাকে, “আপনি ঠিক কথাই বলেছেন মনিদা। কিন্তু ও নিয়ে আমি আর মাথা ঘামাব না, ঠিক করেছি। ওতে কোন লাভ হয় না। ও বড় গোলমেলে ব্যাপার। ওটা আসলে ভবিষ্যতের হিসাব । কিন্তু একদিন আমি কি চাইবা, এখন থেকে সেটা স্থির করে ফেলতেই চাই, ধাধা লেগে যায়। দশ বছর পরে কি চাইব, আজ কি আমি তা জানি ? কোন একটা আদর্শ ধরতে পারলেও কথা ছিল। কিন্তু আপনি তো আমাকে জানেন, আদর্শের জন্য বেঁচে থাকার ধাত আমার নয় । আমি তাই ভেবেছি, নিজেকে বঁাধব না। আমি ঠিক করেছি, ভবিষ্যৎকে গড়ে উঠতে দেব। আজ আমার কাছে যা সব চেয়ে দামী, সব চেয়ে কাম্য, আমি সেটা পাওয়ার চেষ্টা করব। সেজন্য যদি ভবিষ্যতের মস্ত কোন পাওয়া ফন্ধে যায়, যাবে। বড় ভবিষ্যৎ নষ্ট হবার ভয়ে এতদিন কিছু গ্ৰহণ করার নামেই আমার আতঙ্ক হয়েছে, যদি বোঝা বেড়ে যায়। এখনও আমি বড় হতে চাই, যদিও ঠিক জানি না ভবিষ্যতটা কি রকম হলে আমি খুন্সী হব। কিন্তু সব দিক দিয়ে নিজেকে বঞ্চিত করার সাধ আমার নেই ! এখন থেকেই আমি পাওয়া আদায় করতে করতে চলাব, মনিদা !’ । “সে তো ভাল কথা ক্রিষ্টপ।” একটু চিন্তিত ও বিষন্নভাবেই যেন মণীশ কথাটা বলিল। আজ প্ৰভাতের অভিনব উপলব্ধি এখন কথায় প্ৰকাশ করিবার সময়ে ত্ৰিষ্টপ মণীশের কাছে সমর্থন পাওয়ার কথা ভাবে নাই, নিজের মনেই বলিয়া গিয়াছে। এখন সে উৎসুক দৃষ্টিতে মণীশের মুখের দিকে চাহিয়া থাকে। জানাল দিয়া ঘরে একফালি রোদ আসিয়া পড়িয়াছে। মণীশ চাহিয়া দেখিতেছে তার সিগারেটের জলন্ত মুখ হইতে নীলাভ ধোঁয়ার আকাবাঁকা উৰ্দ্ধগতি। সে যে কি ভাবিতেছে, কিছুই বুঝিবার উপায় নাই। “এই জন্যেই আপনার কাছে এসেছিলাম মনিদা ।” “আমার কাছে ? কি ব্যাপার ক্রিস্টুপ ? “আমি কুন্তলাকে বিয়ে করতে চাই।” মণীশ এক মুহূর্ত চুপ করিয়া রহিল। “ত হয় না। তিষ্ট।” এই অপ্রত্যাশিত জবাবে ক্রিষ্টপ থতমত হইয়া গেল। অসহায়ের মত প্রশ্ন করিল, “কেন ?