পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদায়ের ইতিহাস RNS “তবে ? মণীশের পাণ্টা প্রশ্নে ক্রিষ্টপ একেবারে নিভিয়া গেল, মৃদুস্বরে বলিল, “আপনাকেই জিজ্ঞেস করছিলাম।” তা’ করোনি ভাই। তোমার কথা শুনে মনে হল আমার চেয়ে কুন্তীর মন তুমিই ভাল জন। এ তো ভারি মুস্কিলে ফেললে তুমি আমাকে।”

  • “আমার তাই মনে হয় । অবশ্য আপনি যদি বলেন-”

“আমার কথা কি তোমার বিশ্বাস হবে ? আমি হলাম ওর দাদা গুরুজন। তুমি ভাববে, আমি কিছু জানি না, বুঝি না, কিম্বা জানলেও কর্তামি করার জন্য ছেলেমানুষী বলে, সব উড়িয়ে দিচ্ছি। তার চেয়ে এক কাজ করি, ওকে ডেকে দি’! তুমি নিজেই ওর সঙ্গে কথা বলে দেখা।” ক্রিষ্টপ অভিভূত হইয়া বলিল, “ও ছেলেমানুষ—” “তবে ওর মনের কথা তুললে কেন ?” মণীশের কণ্ঠের রুক্ষ্মতায় আহত হইয়া ত্ৰিষ্টপ খানিকক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। “সেজন্য ছেলেমানুষ বলি নি । আমি বলছিলাম, আপনার অমত আছে জেনে ও হয়তো মনের কথা বলতে পারবে না। ’ মণীশ একদৃষ্টি তার মুখের দিকে চাহিয়া থাকিয়া বলিল, “জানো তিষ্ট, তোমার মনের এই জটিলতার জন্যই আমি অমত করছি সহজভাবে কিছু গ্ৰহণ করবার ক্ষমতা তোমার নেই। আমার মত আছে, কি অমত আছে, কুন্তী জানবে কি করে” ? আজি এসে তুমি প্রথম কথা তুললে। এ বিষয়ে আমরা কখনো আলোচনা করি নি ।” ‘আমি বুঝতে পারি নি, মনিদা !? ‘মুস্কিল তো হয়েছে সেইখানে। সব কথাই তুমি নিজের মত করে’ বুঝে নাও। যে ভাবে তুমি নিজে বুঝতে চাও সেই ভাবে।” । এ ঠিক মন্তব্য নয়, সমালোচনা । নিজের সম্বন্ধে এই স্পষ্ট ও কঠোর সমালোচনা স্বীকার করা বা অস্বীকার করার ক্ষমতা ক্রিষ্টপের ছিল না । নিজের সম্বন্ধে নিজেরই তার কত সংশয় আছে, কত প্রশ্ন আছে। কি করিবে স্থির করিয়া ফেলার সঙ্গে ওসব দ্বিধা সন্দেহের মীমাংসা তো আর হইয়া যায় নাই। কতদিক দিয়া কতভাবে নিজেকে তার আবিষ্কার করিতে হইবে, তাও কি এখনো সে জানে ? তার সম্বন্ধে কেউ জোরের সঙ্গে কোন মত প্ৰকাশ করিলে, সঙ্গে সঙ্গে সেটা সত্য কি মিথ্যা, ঠিক করিয়া ফেলিবার মত ভাল করিয়া এখনো সে নিজেকে