পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ऽङ्ष्कान RVà অবস্থা সম্বন্ধে রাজকুমারবাবুর ধারণা খুব স্পষ্ট নয়, তিনি তাই বিশ্বের নারীজাতির কথা তুলেছিলেন, সমগ্রতার অস্পষ্টতায় যাতে খুঁটিনাটির অভাবটা চাপা পড়ে যায়। মাদ্রাজের নারীরাও বিশ্বের নারীজাতীর অন্তর্গত বৈ কি ! মাদ্রাজের নারীদের সম্বন্ধে রাজকুমারবাবু যে সব কথা বলেছেন তার অধিকাংশ বিশ্বের যে কোন দেশের নারীজাতির সম্বন্ধে বলা যায়। মাদ্রাজী মেয়েদের একটিমাত্র বৈশিষ্ট্যের কথা রাজকুমারবাবু স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, যুগোপযোগী সংস্কারকে অত্যন্ত সহজে গ্রহণ করবার অশিক্ষিত পটুতা তাদের নাকি বিস্ময়কর ! স্কুল কলেজের শিক্ষার হিসাবে তারা নাকি ভারতের অন্যান্য প্ৰদেশ, বিশেষ করে বাংলার তুলনায় অনেক পিছনে পড়ে আছেন, কিন্তু জীবন-যাত্রাকে নতুন ছাচে ঢালিবার চেষ্টায় সব প্ৰদেশকে হার মানিসেছেন। এ ধারণা রাজকুমারবাবু যে কোথায় পেলেন কল্পনা করা কঠিন । মাদ্রাজের মেয়েরা তাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে বিশেষ কোন সংস্কারের আমদানী করেছেন, অথবা ও বিষয়ে তঁাদের উল্লেখযোগ্য উৎসাহ দেখা গিয়েছে বলে তো মনে হয় না। নতুন আলো চােখে লাগা আর সেই আলোয় নতুন দৃষ্টিতে জীবনকে যাচাই করার অসুবিধা ও সুযোগের অভাব অন্য সব প্রদেশের মত মাদ্রাজের মেয়েদের ও কিছুমাত্র কম নয় । রাজকুমার চুপ করিয়া শুনিতেছিল এবং ভাবিতেছিল, এইবার সে উঠিয়া দাডাইল । সব সময় তার মুখে যে মৃদু একটু বিবর্ণিতার ছাপ থাকে, রাগে এখন তাহা মুছিয়া গিয়াছে। তবু সে শান্ত কণ্ঠেই বলিল, আমার কথা তুমি ঠিক বুঝতে পারনি শ্যামল । আমি বলেছি অন্য প্রদেশের চেয়ে মাদ্রাজে মেয়ের। পরিবর্তনকে গ্ৰহণ করছে একটু ব্যাপকভাবে, সামান্য হলেও তার ব্যাপ্তি আছে। বাংলায় মেয়েদের খুব সামান্য একটা অংশ অনেক এগিয়ে গেছে, তাদের সংখ্যা এত কম যে ধর্তব্যের মধ্যেই বলা চলে না । বাকী সকলে অর্থাৎ বাংলা দেশের মেয়ে বলতে যাদের বুঝায় তারা পড়ে আছে। একেবারে পিছনে। মাদ্রাজের মেয়েদের একটা ক্ষুদ্র অংশবিশেষ। এভাবে এগিয়ে না গিয়ে সকলে মিলে অল্প অল্প অগ্রসর হচ্ছে । ব্যাপারটা কেমন হয়েছে জান, বাংলায় একটুখানি নারীপ্রগতি যেন সঞ্চিত হয়েছে কঁাচের সরু নলে, গভীরতা আছে কিন্তু ব্যাপ্তি নেই। আর মাদ্রাজের নারী-প্ৰগতিটুকু সঞ্চিত হয়েছে। থালায়, গভীরতা নেই। কিন্তু বিস্তার আছে। আমি মনে করি, মুতদেহের একটা আঙ্গুল প্ৰাণ পেয়ে যতই তিড়িৎ তিড়িৎ করে লাফিয়ে জীবনের প্রমাণ দিক, তার চেয়ে সর্বাঙ্গে একটুখানি প্ৰাণ সঞ্চার হয়ে শরীরটা যদি এক ডিগ্রিও

  • গরম হয়, তাও অনেক ভাল ।