পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bछ्रकां१ RV96 তাই, রাজকুমার আসিবে কি আসিবে না ঠিক না থাকায় দুপুরের গুমোটের স্বেদে আত্মশ্লানিময় শরীরটিকে সযত্ন প্রসাধনে একটু চাঙ্গা করিয়া তুলিয়া পড়ার জন্য প্ৰস্তুত হইয়াই সে অপেক্ষা করিতেছিল । না আসে রাজকুমার নাই আসিবে। যদি আসে — রাজকুমার আসিল এবং কোন রকম ভূমিকা না করিয়াই পড়াইতে আরম্ভ করিয়া দিল। কেবল পড়িতে নয় পডাইতেও সে খুব পটু। মানুষের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় অনেক সময় কথার অভাবে তাকে মূক হইয়া থাকিতে হয়। কিন্তু আলাপ আলোচনার উপরের স্তরের চিন্তাগুলিকে খুব সহজেই শব্দের রূপান্তর দিতে পারে। কোন বিষয় ব্যাখ্যা করিয়া বুঝাইবার সময় সে মাসগুল হইয়া যায়। পড়ার সময় মালতীও কোন রকম দুষ্টামি করে না । ইচ্ছাও হয় না, সাহসও পায় না । এ সময় বাজে কথায় রাজকুমার বন্ড বিরক্ত হয়। একদিন স্বভাব দোষে অতি হাল্কা আর অতি সূক্ষ্ম একটা খোচা দেওয়া রসিকতা করিয়া বসায় রাগ করিয়া রাজকুমার তিন দিন তাকে পড়াইতে আসে নাই। পড়ানোর জন্য রাজকুমার বেতন পায়, তবু । বৃষ্টি না নামিলে হযতে রাজকুমার মালতীকে আজ পড়াইতে আসিত না । বিশ্বজগতের সম্রাট আজ আর সে নয়, সন্ধ্যার আগে বৃষ্টি আসার সময় পৰ্যন্ত সে যা ছিল । মানুষের মনের এটা কি জটিল রাজনীতির ব্যাপার কে জানে, সারাদিনের অবিরাম বর্ষণ হঠাৎ থামিয়া যাওয়াকে উপলক্ষ করিয়াই এক মুহুর্তে রাজা ভিখারী হইয়া যায়। বেশ ছিল সে সারাদিন। সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়া দেখিয়াছিল, রোদ নাই, জমাট বাধা কালো মেঘের গভীর ছায়া নামিয়াছে। কি যে তৃপ্তি বোধ হইয়াছিল রাজকুমারের। তারপর বৃষ্টি নামিতে জাগিয়াছিল উল্লাস, জীবনে ফাকি ছিল না, অপূর্ণতা ছিল না, নিজের ঘরটিতে বন্দী হইয়া থাকিয়াও মনে হইয়াছিল বাহিরের যে জগৎ জলে ভাসিয়া যাইতেছে তার সঙ্গে তার সম্পর্ক কিসের? ঘরে বন্দী থাক দেহ, কোটি বছর অমনি তৃপ্তি আর আনন্দের সঙ্গে মন রাজত্ব করুক নিজের রাজ্যে । তারপর বৃষ্টি থামিয়া গেল। মেঘের ওপারেও তখন রোদ নাই। মেঘের ছায়া। ধীরে ঢাকিয়া যাইতেছে গাঢ়তর রাত্রির ছায়ায়। তখন মনে হইয়াছিল, বৃষ্টি যখন নাই, এবার বাহির হওয়া যাইতে পারে-বাড়ীর বাহিরে যে জগতে গিরি, রিণি, সরসী আর মালতী বাস করে সেই জগতে। কিন্তু এই বাদল দিনের শেষে বাড়ী ছাড়িয়া বাহির হওয়া যায়, পথে পথে ঘুরিয়া বেড়ানো যায় যত খুসী, ওদের