পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bङ्कार्भ RQ)Y হয়। পরেশকে না চটাইলেই হইত। এরকম সন্তা অভিমান দেখিলেই কেন যে তার আঘাত দিতে ইচ্ছা হয়! ছেলেবেলা ফাপানো খেলনা বেলুন দেখিলেই যেমন ফুটা না করিয়া থাকিতে পারিত না, এখন ফাকা মানুষের সংস্পর্শে আসিলেই ফকিতে খোচা দেওয়ার সাধটা তেমনি সে দমন করিতে পারে না । মানুষের সঙ্গে এই জন্য তার বনে না। আবেগ আর অভিমানে সায় দেওয়ার তোষামোদ জানে না বলিয়া আত্মীয় বন্ধু অনেকের কাছেই সে পছন্দসই লোক নয়। দশজনের সঙ্গে খাপ খাইয়া চলার প্রধান মন্ত্রটিই সে বাতিল করিয়া রাখে । ভাবিতে ভাবিতে গভীর একাকীত্বের অনুভূতি তাকে বিষন্ন করিয়া দেয়। মানুষের সঙ্গে লাভের এমন একটা জোরালো কামনা সে অনুভব করে যেন বহুদিন অরণ্যে বা প্ৰান্তরে বাস করিতেছে । ক্লাবের কথা মনে পড়ায় তাড়াতাড়ি সে সেখানে গিয়া হাজির হয় । টেনিস খেলার সখ জাগায় একদিন সে ক্লাবে যোগ দিয়াছিল, তারপর নিয়মিত চান্দা দিয়া আসিতেছে কিন্তু ক্লাবে যাতায়াত করে কদাচিৎ । এই ব্যাপারটাও আজ যেন তার খেয়াল হইল প্ৰথম। ক্লাবের সে মেম্বার, ক্লাবে সুযোগ আছে খেলা-ধূলা ও দশজনের সঙ্গে মেলামেশা করার, কিন্তু ক্লাবের জন্য কোন আকর্ষণ সে অনুভব করে না। মানুষের সঙ্গ সে কি ভালবাসে না ? মানুষটা সে কি কুনো ? অথবা দশজনের সঙ্গে মানাইয়া চলিতে পারে না বলিয়া দশজনকে এড়াইয়া চলে ? স্যার কে, এল প্ৰায়ই ক্লাবে বিলিয়ার্ড খেলিতে আসেন। তিনজন অর্ধপরিচিতের সঙ্গে ব্রিজ খেলিতে বসিয়া রাত ন’টার সময় বিরক্তিতে রাজকুমারের চোখে যখন প্ৰায় জল আসিয়া পড়ার উপক্ৰম করিয়াছে, স্যার কে, এল ই তাকে উদ্ধার করিলেন । গাভীতে উঠিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, হঠাৎ তুমি আজ এদিকে ? রাজকুমার বলিল, আডিডা দিতে এসেছিলাম। কিন্তু আডিডা আমার একেবারে সয় না । আমারও সয় না। তবু আডা দিই। পথে হস্তার কে, এল-এর এক বন্ধুর বাড়ী হইতে রিণিকে তুলিয়া নেওয়ার কথা ছিল। রিণি এখানে প্ৰায়ই রাত্রে টেনিস খেলিতে আসে। বিকালে সে খেলে না । খেলার পর ’ষে শ্ৰান্তি বোধ হয় তাতে নাকি বিকালটা তার মাটি হইয়া যায়। রিণির দেখাদেখি আরও কয়েকটি ছেলেমেয়ে নাকি বিকালের বদলে রাত্রে টেনিস খেলার সুবিধা বুঝিতে পারিয়াছে।