পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুষ্কোণ 臀 RRIVÒ পারে। অনেক রকম সম্ভাবনাই আছে। ভাল করিয়া ভাবিয়া দেখা দরকার । কিন্তু অনুরোধটা জানাইলে রিণির কাছে কি রকম প্ৰতিক্রিয়া আশা করা উচিত সে বিষয়ে তাকে ভাবিতে হইতেছে কেন ? ঠিক কি রকম প্ৰতিক্রিয়া হইবে এতদিন রিণিকে জানিয়া এটুকুও সে কি অনুমান করিতে পারে না ? রিণি বাড়ীর মধ্যে চলিয়া যাইতেছিল, রাজকুমার তাড়াতাড়ি গিয়া বলিল, তোমার সঙ্গে আমার একটা কথা আছে রিণি। খুব দরকারী কথা । রিণি আশ্চৰ্য হয় না । কোথাও কিছু নাই, হঠাৎ খাপছাড়া উত্তেজনার সঙ্গে খুব দরকারী একটা কথা বলিতে চাওয়া, রিণি তার মানে জানে। ঠিক এমনিভাবে ওরা চিরদিন কথাটা জানায়। বলার সুযোগ যখন থাকে তখন কিছু বলে না, আজকালের মধ্যে আবার সুযোগ আসিবে জানিয়াও অপেক্ষা করিতে পারে না; অসময়ে ব্যস্ত হইয়া উঠে । কি কথা ? ঘরে চলে, বলছি । দু’চার মিনিটে বলা হবে না বোধ হয় ? না। একটু সময় লাগবে। অনেক কথা বুঝিয়ে বলতে হবে তোমাকে । আমারও বুঝতে সময় লাগবে নিশ্চয়। মালতীর মত বুদ্ধি তো নেই। রিণির এই ঈর্ষার খোচাটা রাজকুমারকে তিরস্কারের মত আঘাত করিল। মালতীর কথা তার মনেই ছিল না। নূতন চিন্তাটাই কিছুদিন হইতে তার মন জুড়িয়া আছে। মালতী নামে যে একটি মেয়ে আছে জগতে, গত বর্ষার এক সন্ধ্যায় ওই মেয়েটিকে যে জগতের অন্য সব মেয়ের চেয়ে সে কাছে আসিতে দিয়াছে, এসব সে যেন ভুলিয়াই গিয়াছিল। মালতীকে সে আর পড়ায় না । এবার মালতীর পরীক্ষা, ভালভাবে পাশ করার আগ্রহ তার চিরদিন খুব প্ৰবল। রাজকুমারের কাছে পড়িলে তার আর পাশ করার ভরসা নাই। রাজকুমার তাই নিজেই পড়ানো বন্ধ করিয়া দিয়াছে। মালতী’ও আপত্তি করে নাই। তার আসা-যাওয়া যে একেবারে কমিয়া গিয়াছে, বাদ পড়িয়াছে অতি প্ৰয়োজনীয় অনাবশ্যক কথা বলা, সেজন্যও মালতীর কাছ হইতে কোন নালিশ আসে নাই। হয়তো মালতী ভাবিয়াছে পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটানোর ভয়ে সে যায় না, পরীক্ষার আগে আবেগ ও উত্তেজনায় তাকে একটি দিনের জন্যও অশান্ত করিতে চায় না। ভাবিয়া মালতী হয়তো কৃতজ্ঞতাই বোধ করিতেছে।