পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুকোণ VSS) তুমি কাউকে ভালবাসো না, নিজেকে পর্যন্ত নয়। সব সময় তুমি ছটফট করছ, কি করলে একটু স্বন্তি পাবে। সর্বস্ব হারিয়ে গেলে মানুষ যেমন পাগলের মত খুঁজে খুঁজে বেড়ায়, তুমিও ঠিক তেমনি ভাবে কি যেন খুঁজে বেড়ােচ্ছ। থিয়োৱী ? তুমি পাগল রাজুদা । দেহের গড়নের সঙ্গে মানুষের প্রকৃতির সম্পর্ক কি তাই টেষ্ট করার জন্য কেউ এভাবে ব্যাকুল হয় ? তোমার আরও সিরিয়াস কিছু হয়েছে, এ শুধু তার একটা লক্ষণ। আমার কান্না পাচ্ছে বুঝতে পারছি ? সেটা সহজেই বুঝা যাইতেছিল। গলা ভারি হইয়া চোখ জলে ভরিয়া আসিয়াছে। রাজকুমার তাড়াতাড়ি বলিল, কেঁদো না। সরসী । কান্না আমি সইতে eांत्रि नां । কান্না পেলেই আমি কঁাদি না কি ? তাই তো তোমায় ভালবাসি। ভালবাসে না, ছাই। পছন্দ করা। ভালবাসলে তো বেঁচে যেত। রাজকুমার করুণভাবে একটু হাসিল । সরাসীকে সে পছন্দ করে, স্নেহ করে, একটি ভয়ও করে। নিজের সম্বন্ধে এই স্পষ্ট ও সহজ কথাগুলি সরসী ছাড কারও কাছে সে শুনিতে পাইত না। অনেক দিন হইতেই সরসী জানে তার ভিতরে কিছু একটা গোলমাল চলিতেছে । নিজের সম্বন্ধে নিজে সে কখনো এভাবে চিন্তা করে নাই। যখন এ বিষয়ে কিছু ভাবিয়াছে, স্থূল বাস্তব জগতের আপেক্ষিকতার মাপকাঠিতে বিচার করিয়া বুঝিতে চাহিয়াছে, ব্যাপারখানা কি। নিজের সম্বন্ধে যত কেন জাগিয়াছে, তার সবগুলির জবাব খুজিয়াছে যে অভিধানে শুধু সাধারণ চলতি মানে পাওয়া যায়। মুদীর হিসাবে যেন সুখ-দুঃখের হিসাব কষিয়াছে। ভূমিকম্পের কারণ খুজিয়াছে মাটির উপরে। আরও যে অনেক উষ্ণগহন স্তর আছে মাটির নীচে এ যেন সে ভুলিয়াই গিয়াছিল। আজ সরসী মনে পড়াইয়া দিয়াছে। গভীর কৃতজ্ঞায় অনেকদিন পরে রাজকুমারের হৃদয়গ্ৰন্থিতে স্রাব হয় চোখের জলের মত নোনতা সুস্বাদু রসের, শুকনো মন একটু ভিজিয়া ওঠে। সরসী বলিল, এত বড় হলে বসতে ভাল লাগছে না । ওপরে যাবে ? চলো । উপরে দু'টি পাশাপাশি ঘর সরসীর, একটিতে সে বসে, অপরটিতে শোয়। মাঝখানে একটি দরজা আছে, ঘর দু’টির ব্যবধান বজায় রাখিতে দরজাটি সে অধিকাংশ সময় বন্ধ করিয়া রাখে, সামনের বারান্দা ঘুরিয়া যাতায়াত করে এঘর হইতে ওঘরে । বসিবার ঘরে রাজকুমারকে বসাইয়া সে বাহিরে চলিয়া গেল। একপাশে