পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

98) बांनिक jहांबौ রাজুভাই ? একটা কচি মেয়ের সঙ্গে খেলা করতে মজা লাগছিল ? বিয়ের যুগ্যি কনের জন্য একটা বর গাঁথতে তার মতলবীবাজ দিদি কেমন করে ফান্দ পাতে সেই রগড় দেখছিলে ? না, দিদি। গোড়া থেকে কালীকে আমার ভাল লেগেছিল। মুখ তুলিয়া সাগ্রহে মনোরমা বলে, তবে ? রাজকুমারের মুখের দিকে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে আগ্রহ তার আপনা হইতে বিমাইয়া যায়। আবার মুখ নীচু করিয়া খোকার বালিশ হইতে একটি পিপড়ে ঝাড়িয়া ফেলে, ধীরে ধীরে মেঝেতে আঁচড় কাটিতে কাটিতে বলে, তোমার দোষ নেই রাজুভাই, আমার বোকামি হয়েছে। নিজের ইচ্ছেটাই আমি বড় করে দেখছিলাম। যদি বলি কালীর বিয়ের ভাবনা আমাদের ছিল না, বিশ্বাস করবে। রাজু ভাই ? তুমি তো দেখে এসেছে, ওর বাবার অবস্থা খারাপ নয়। মেয়েটাকে সস্তায় তোমার ঘাড়ে চাপানো যাবে বলে চেষ্টা করিনি ভাই। তা জানি দিদি । ওকথা আমার মনেও আসেনি । ওর বয়সে আমিও ওর মত হাবাগোবা মেয়ে ছিলাম রাজুভাই। কালী হাবাগোবা মেয়ে নয় দিদি। বুদ্ধি যথেষ্ট আছে, পাকামি নেই বলে হাবাগোবা মনে হয়। মনোরম যেন শুনিয়াও শোনেনা আপন মনে বলিতে থাকে, এমন বেঁক আমার কেন চাপল কে জানে ! দিনরাত কেবল মনে হত, তোমার সঙ্গে ভাব হবে, বিয়ে হবে, কালীর জীবন সার্থক হবে, আমারও সুখের সীমা থাকবে না। মস্ত একটা ভার যেন নেমে যাবে মনে হত। মনোরমাকে দেখিলে চমক লাগিয়া যায়। বিষাদ ও হতাশার যন্ত্রণায় মুখ যেন ? তার কালো হইয়া বঁাকিয়া গিয়াছে। কালীর বদলে তাকেই যেন প্ৰত্যাখ্যান করিয়াছে রাজকুমার, বুক তার ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, হাড়-পাঁজর সমেত। মমতা বোধ করার বদলে তাকে রাজকুমারের আঘাত করিতে ইচ্ছা হয়। তার সংস্পর্শে আসিয়া তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়িয়া তুলিবার প্রয়োজনে কালীর কিশোর মনে বিকার আসিতেছে ভাবিয়া সে দুঃখ পাইতেছিল, কালীর মধ্যস্থতায় নিজের মনের আবছায়া গোপনতার অন্তরালবর্তিনী মনোরমা তার সঙ্গে কি অদ্ভুত যোগাযোগ সৃষ্টি করিয়াছে দ্যাখে । কালীর আবির্ভাবের আগের ও পরের মনোরমার অনেক তুচ্ছ কথা, ভঙ্গি, ভাব ও চাহনি, অনেক ছোট বড় পরিবর্তন, রাজকুমারের মনে পড়িতে থাকে ।