পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

फड्रष्कां१ VO8 মনে পড়িতে থাকে শেষের দিকে তার সমাদর ও অবহেলায় কালীর মুখে যে, আনন্দ ও বিষাদের আবির্ভাব ঘটিত, কতবার মনোরমার মুখে তার প্রতিচ্ছায়া দেখিয়াছে। কালীর চেয়েও মনোরমার প্রত্যাশা ও উৎকণ্ঠ মনে হইয়াছে গভীর। মনোরমা মরার মত বলে, আমি ভাবছি ও ছুড়ি না। সারাটা জীবন জলে পুড়ে মরে। আমি কি করলাম রাজুভাই ? মনোরম পর্যন্ত বিকারের অর্ঘ্য দিয়া নিজের জীবনে তাকে অভ্যর্থনা ? করিয়াছে, এ জালা রাজকুমার ভুলিতে পারিতেছিল না। অশ্রুজিলের ইতিহাস হয়তো আছে, নিপীড়িত বন্দী-মনের স্বপ্ন-পিপাসা হয়তো প্রেরণা দিয়াছে, তবু রাজকুমার মনোরমাকে ক্ষমা করিতে পারে না, নিষ্ঠুরভাবে ধমক দিয়া বলে, কি বকছ পাগলের মত ? কালী তোমার মত কাব্য জানে না দিদি। দিব্যি হেসে খেলে জীবন কাটিয়ে দেবে, তোমার ভয় নেই। মনোরমা বিস্ফারিত চোখে চাহিয়া থাকে। রাজকুমার আঘাত করিলেও সে। বুঝি এতখানি আহত হইত না । দুদিন পরে নিজেই সে কালীকে তার মার কাছে রাখিয়া আসিতে যায়। আর ফিরিয়া আসে না । মাসকাবারে তার স্বামী বাসা তুলিয়া দিয়া সাময়িকভাবে আশ্রয় নেয় বোর্ডিং-এ। রাজকুমার বুঝিতে পারে যে সোজাসুজি তার বাড়ী ছাড়িয়া অন্য বাড়ীতে উঠিয়া যাইতে মনোরম সঙ্কোচ বোধ করিয়াছে। বোডিং-এর ভাত খাইয়া স্বামী তার রোগ হইয়া যাইতেছে দেখিয়া দু’এক মাস পরেই মনোরম সহরে অন্য বাড়ীতে নীড় বঁাধিবে । হয়তো কালীর শুভবিবাহের পর। ইতিমধ্যে যদি কালীর বিবাহ না-ও হয়, কয়েক মাসের মধ্যে হইবে সন্দেহ নাই। মনোরম তখন একদিন এবাড়ীতে আসিবে, কালীর বিবাহে তাকে নিমন্ত্ৰণ করিতে । আঘাত করিতে আসিয়া মনোরমার চোখ যদি সেদিন ছল ছল করিয়া ওঠে ?” বিষাদ ও হতাশায় আবার যদি মুখখানা তার কালো আর বঁাকা হইয়া যায় ? রোমাঞ্চকর বিষাদের অনুভূতিতে রাজকুমারের সর্বাঙ্গে শিহরণ বহিয়া যায়। মালতীর সঙ্গে তার প্রায় দেখাই হয় না। মালতীও সাড়া শব্দ দেয় না। সরাসীর কাছে রাজকুমার তার খবর পায়। আপনা হইতে সব ঠিক হইয়া যাইবে, জানিলেও মালতীর সম্বন্ধে রাজকুমারের ভাবনা ছিল। আপনা হইতে সব ঠিক হইয়া যাওয়ার প্রক্রিয়াটি তো সহজ বা সংক্ষিপ্ত হইবে না। মালতীর পক্ষে, কষ্টকর। দীর্ঘ মানসিক বিপৰ্যয়ের মধ্যে তাকে কতদিন কাটাইতে হইবে কে জানে ? তার সাহায্য পাইলে এই দুঃখের দিনগুলি হয়তো মালতীর আরেকটু সহনীয় হইত। কিন্তু,