পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V9R भांनिक @jहांदळेौ কুলি। গাওতলীতে ঘরের লােগাও সাত কাঠা জমি আছে জগুর, তাতে জণ্ড বরাবর লাঙ্গল দিয়ে ফসল ফলিয়ে আসছে নিজে, কিন্তু মুচীকে কে চাষী বলবে সেজন্য, সরোজ বাড়ুয্যে মুদীখানা খুলেও যখন মুদী নন। সরোজ বািড়য্যের দোকানের সামনে রাস্তার ধারে জগু জুতো সেলাই করতে বসে, প্ৰায় আপিস টাইম থেকে সন্ধ্যাতক। থানা আদালত জেলখানার বঁাকা আর সাফসুরৎ এলাকা থেকে মধুবাণীর অভিজাততম পথটি আভিজাত্য হারাতে হারাতে গোটা কয়েক মোড় ঘুরে এইখানে বঁাক নিয়ে বাজারের ঘিঞ্জি অঞ্চলে ঢুকছে, নোংরা। আর সঙ্কীর্ণ হয়ে। বঁাকেরই আন্তরিক কোণটার ওপর বাড়িয্যের মুদীখানা— দোকানও বড়, বিক্ৰীও খুব । জগুর রোজগার মন্দ হয় না, মাসে অন্ততঃ পাচ সাতদিন শ’টাকা পুরে যায়। গড়পড়তা তিনদিনে একদিন জগু দু’নম্বর দেশী গিলে বাড়ী ফেরে - সন্ধ্যা পার করে রওনা হয় । অন্যদিন দিনের আলো খানিকটা বজায় থাকতেই উঠে পড়ে। বড় পথটা ধরেই তাকে আসা যাওয়া করতে হয় - থানা আদালত আর জেলখানার সরকারী পাড়া পেরিয়ে । জেলটা তার চেনা, ভেতরে দু'দফায় কিছুকাল বাস করেছে। বাজার আর আদালতের মাঝে পথের দু’ধারে বাড়ীগুলি বেশীর ভাগ ভাঙ্গাচোরা ইট বার করা সেকেলে ধাচের পুরাণে অথবা বদরঙা সেকেলে ধাচের নতুন। কয়েকটি বাড়ীর চেহারা শুধু খানিক আধুনিক। সকালে ও বিকেলে এসব বাড়ীর কোন কোনটা থেকে ডাক আসে : ‘এই মুচি ! মুচি !” সকালে আসবার সময় জগু ডাক শোনে, দরে বনলে জুতো সারায়। বিকালে হাজার গলা ফাটানো শুনে সে ফিরেও তাকায় না । মরা খিদেয়। আর শ্রান্তিতে মন তখন তার উদাস হয়ে আছে। পূজা উপলক্ষে পটল একজোড়া জুতো কিনেছিল। দু’দিন পায়ে দিতেই জুতোর একটা পেরেক ডান পায়ে বিধিতে লাগল। জুতোটা হাতে নিয়ে সে দ্যাথে, খানিকটা সোল কি কবে যেন কোথায় খসে পড়ে গেছে। সস্তায় জুতো কেনার প্রায়শ্চিত যে দু'দিনের মধ্যে শুরু হয়। পটলের সে অভিজ্ঞতা ছিল না। জুতােটা সারাতে দিয়ে বঁাডুয্যের দোকানের ময়লা বেঞ্চে বসে খানিকক্ষণ সে একটানা সেই জুয়াচােরদের গাল দিতে লাগল, মানুষকে যারা নতুন বলে পুৱাণো খারাপ জুতো দিয়ে ঠকায়। তার সমালোচনার মোট কথার মানে হল, ওরা ছাড়া পৃথিবীতে আর বুঝি জুয়াচোর নেই।