পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vitr মানিক গ্ৰন্থাবলী এতগুলি মানুষ দেখে লাজায় সে জিভা কাটে । কোমরে এক-পাক জড়ানো ছেড়া কঁথাখানা চট করে খুলে নিয়ে মাথায় ঘোমটার মতো চাপিয়ে এগিয়ে যায়। ঘরের দিকে । Aih ঘরের সামনে পুরোনো কঁাটাল গাছের ছায়ায় বসে রামপদ সবে হুকোয় টান দিয়েছিল। তামাক সেজেছে একটুখানি, ডুমুৱা ফলের মতো। তামাক পাওয়া বড় কষ্ট। মুক্তাকে সাথে নিয়ে ওদের আসতে দেখে সে হুকোটা গাছে ঠেস দিয়ে রেখে উঠে দাড়ায়। এমনিই পুড়ে যেতে থাকে তার অত কষ্টে যোগাড় করা उदक । “আসেন।” রামপদ বলে ক্লিষ্ট স্বরে, দ্বিধা-সংশয়-পীড়ীত ভীরু অসাহায়ের মতো। তিন জন কাছে এগিয়ে এসেছে, ওদের দিকে না তাকিয়েই সে অনিশ্চিত অভ্যর্থনা জানায়, চোখ সে পেতে রাখে মুক্তার উপর। খানিক তফাতে থাকতেই মুক্তা থেমে গিয়ে হয়ে আছে কাঠের পুতুল। “তোমার বোঁকে দিয়ে গেলাম ভাই। যা বলার সব তোমায় বলেছি। ওর মন ঠিক আছে। যা হবার হয়ে গেছে, ভুলে গিয়ে আবার তোমরা ঘর-সংসার পাতো । আর এক দিন এসে আমরা দেখে যাব ।” “দিয়ে তো গেলেন।” বলে উৎসাহহীন বিমর্ষ রামপদ।। মাথার চুলে হাত বুলিয়ে একবার সে ঢোক গেলে, চোখের পাতা পিটি-পিট করে তার। শীর্ণ মুখখান বসন্তের দাগে ভরা, চুপিসানো বা গালটাতে লম্বা ক্ষতের দাগ। তবু এই মুখেও তার হৃদয়ের জোরালো আলোড়নের কিছু কিছু নির্দেশ ফুটেছে তার শিথিল নিস্তেজ সৰ্বাঙ্গজোড়া ঘোষণার সুস্পষ্ট মানে ভেদ করে। “যাবে বলেছিলে, গেলে না কেন রামপদ ? “তই তো মুস্কিল হয়েছে দিদিমণি ।” সমাজ তাকে শাসিয়েছে, বৌকে ঘরে নেওয়া চলবে না। নিলে বিপদ আছে। সমাজ মানে ঘনশ্যাম দাস, কানাই বিশ্বাস, নিধু নন্দী, লোচন কুমার, বিধু ঘোষ, মধু নন্দী এরা ক’জন। ঘনশ্যাম এক রকম সমাজপতি এ অঞ্চলের চাষা-ভুষোদের, অর্থাৎ চাৰী গায়লা কামার কুমোর তেলি ঘরামি জেলে প্ৰভৃতির। সে-ই ডেকে কাল ধমক দিয়ে বারণ করে দিয়েছে রামপদকে। অন্য ক’জন উপস্থিত ছিল সেখানে। একটু ভয় হয়েছে তাই রামপদ’র। একটু ভাবনা হয়েছে। ! নৌকাতে পাতবার সতরঞ্চিটা কঁাটাল তলায় বিছিয়ে তিন জন বসে।