পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুঃশাসনীয় আগে, কিছুকাল আগে, বেশীদিনের কথা নয়, গভীর রাতেও হাতিপুৱা গ্রামে এলে লোকালয়ের বাস্তব অনুভূতিতে স্বস্তি মিলত। মানুষের দেখা না মিলুক, মাঠ, ক্ষেত ডোবাপুকুর, ঝোপঝাড়, জলা অপরিসীম রহস্যে ভরাট হয়ে থাক, হুতোম প্যাচ ডেকে উঠুক হঠাৎ, জঙ্গলের আড়ালে শুকনো পাতা মচমচেয়ে হাঁটুক রাত্রিচর পশু, বটপুকুরের পূর্বোত্তর কোণের তালবন থেকে খোন কান্না ভেসে আমুক আবদেরে শকুন ছানার, দীপচিহ্নহীন ছায়ান্ধকারে নিঝুম হয়ে ঘুমিয়ে থাক সারাটি গ্রাম-এসবই যোগাত ভরসা, রাত দুপুরে ঘুমন্ত গ্রামের এই সমস্ত লাগসই পরিবেশ ও পরিচয় । গ্রাম তো এই রকমই বাংলার, রাত্রে সব গ্ৰাম । গা ছম-ছম করত। ভয়ের সংস্কারে, ভয় পাবার ভয়ে, সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে নয়। আজ তার হাতিপুরে এলে ভয় পাবে, সন্ধ্যার পর বাংলার গাগুলির স্বাভাবিক পরিবেশ আজ কি দাড়িয়েছে যারা জানে না । বাংলার গায়ের কথা ভেবে বসে যেসব ভদ্রলোকের মাথা চিন্তায় ফেটে যাচ্ছে তাদের কথাই ধরা যাক। বাংলার গাঁয়ে গাঁয়ে যে অভূতপূর্ব ভৌতিক কাণ্ডকারখানা চলছে সে বিষয়ে একান্ত অভিজ্ঞ এইরকম কোন ভদ্রলোক আজকাল একটু রাত করে হাতিপুরে এলে ভয়ে দাঁত কপাটি লেগে মুচ্ছ যাবে। এরা বড়ই সংস্কার-বাঁশ, মন প্রায় অবশ্য। অতএব, দুর্ভিক্ষে গায়ের অধিকাংশের অপমৃত্যু-নিরুদ্ধার, এ জান জন্মেই আছে। তারপর সেই গাঁয়ে চারিদিকে ছায়ামূর্তির সঞ্চরণ চােখে দেখে এবং মর্মে অনুভব করে তাদের কি সন্দেহ থাকতে পারে যে জীবিতের জগৎ পার হয়ে তারা ছায়ামূর্তির জগতে এসে পৌছে গেছে। -ল গাছপালার আড়ালে একটা ছনের বাড়ী। বাড়ীর সামনে ভাঙ্গা বেড়া কাত হয়েও দাড়িয়ে আছে। বেড়ার ও পাশ থেকে নিঃশব্দে ছায়া বেরিয়ে এসে হনহন