পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

чSvR निक jहांडी বাড়ীতে রাখবে তোমার ?” “বাড়ীতে নয় তো কোথা রাখবো চক্কোত্তি মশায় ?” কেশব রাজী হয়ে বলে, “একটু ভেবে দেখি । ভগবান তোমার মঙ্গল করুন বাবা, একটু ভেবে দেখি।” কালাচাদ খুলী হয়ে বলে, “বুধবার আসব। একটু বেশী রাতেই আসব, গাড়ীতে সব নিয়ে আসব। কার মনে কি আছে বলা তো যায় না চক্কোত্তি মশায়, আপনি বরং বলবেন যে, শৈল মামাবাড়ী গেছে।” কেশব চােখ বুজে বলে, ‘কেউ জানতে চাইবে না। বাবা। কারো অত জানবার গরজ আর নেই। যদি বা জানে শৈলি নেই, ধরে নেবে মরে গেছে।” শৈলকে দেখা যাচ্ছিল। এত রোগা যে একটু কুঁজো হয়ে গিয়েছে। মনের গহন অন্ধকারে শৈশবের ভয় নড়াচড়া করে ওঠায় কালাচাঁদ একটু শিহরে ওঠে। সারা দেশটাতে বড় সস্তা আর সহজ হয়ে গিয়েছে মানুষের মরণ । নিরুপায়, তবু ভাবতে হয়। ভাববার ক্ষমতা নেই, তবু ভাবতে হয়। উদরের ভোতা বেদনা কুয়াশার মতে কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠে। মাথার মধ্যে সব ঝাপসা করে রেখেছে, কী করা উচিত। তার জবাব কোথায়, কে জানে! ভাবতে গেলে মাথার বদলে কেশবের শরীরটাই যেন বিমঝিম করে । এ গায়ের রাখালের বোন আর দীনেশের মেয়ে এভাবে বিক্রী হয়েছিল । কালাচাদের কাছে নয়, অন্য দু’জন ভিন্ন লোকের কাছে। তবু তো শেষ পর্যন্ত রাখাল বাঁচতে পারেনি। ঘরে মরে পচে সে চারিদিকে দুৰ্গন্ধ ছড়িয়েছে। দীনেশ ও তার পরিবারের ঝড়তি পড়তি মানুষ ক’টাকে নিয়ে কোথায় যেন পাড়ি দিয়েছে তার ঠিকানা নেই। তাছাড়া ওরা কেউ বামুন নয়। ঠিক কেশবের মতো ভদ্রও নয়। শুদ্ৰজাতীয় সাধারণ গোরস্থ মানুষ। ওরা যা পেরেছে কেশবের কি তা পারা উচিত। বুকটা ধড়ফড় করে কেশবের । তার মৃতদেহের নাড়ী সচল হয়। তালাধর কাণে শঙ্খ ঘণ্টা সংস্কৃত শব্দের গুঞ্জন শোনে, চুলকানি ভরা ত্বকে স্নান ও তসরের স্পর্শ পায়, পচা মড়ার স্মৃতিভ্ৰষ্ট নাকে ফুল চন্দনের গন্ধ লাগে। বন্ধ করা চোখের সামনে এলোমেলে উল্টোপাল্টাভাবে ভেসে আসে ছাতনাতলা, যজ্ঞাগ্নি, দানসামগ্ৰী চেলিপির শৈল, সারি সারি মানুষের সামনে সারি সারি কলাপাত । মনে যেন পড়তে থাকে। সে শৈলের বাপ ! কচুশাক দিয়ে ফ্যানভাত দু'টি খাওয়ার সময় সারি সারি লোকের সম্মুখে সারি সারি কলাপাতা দেওয়ার জন্য জালগা৷ উনানে চাপানো বড় বড় হাঁড়ি ও কাড়াইভের অল্পব্যঞ্জনের গন্ধ ও সান্নিধ্য যেন কেশবের নিশ্বাসকে চিরকালের মতো