পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ কাল পর্যন্তর গল্প VOVD টেনে নিয়ে দ্রুত উপে যায়। কে কার বাপ সেটা অগ্ৰাহ করার পক্ষে তাই আবার হয় যথেষ্ট । শৈলর মা বিনায়, কঁদে না। বিমায় আর গুণগুণানো গানের সুরে বিনায়। শুনলে মনে হয়। ঘরে বুঝি ভ্ৰমর আসছে। শৈলীর শ্রবণশক্তি তীক্ষ বলে সে মাঝে মাঝে কথাগুলি শুনতে পায় : তোর মরণ হয় না ! সবাই মরে তোর মরণ নেই! ভাইকে খেলি, বোনকে খেলি, নিজেকে খেতে পারলিনে পোড়ারমুখী ! মর তুই মর! কলকাতায় যাবার আগে মর! শৈলর রসকস শুকিয়ে গিয়েছে। মনে তার দুঃখবেদন মান অভিমান কিছুই জাগে না । খিদের বালাইও যেন তার নেই! কালাচাদের সঙ্গে যেখানে হোক গিয়ে দু'বেলা পেট ভরে খাওয়ার কথা ভাবলে তার শুধু ঘন ঘন রোমাঞ্চ হয়। তার নারীদেহের সহজ ধর্ম রক্তমাংসের আশ্রয় ছেড়ে শিরায় গিয়ে ঠেকেছে। প্যাচড়া চুলকিয়ে সুখ হয় না ; রক্ত বার হলে ব্যথা লাগে না। অথচ পেট মোট ছোট ভাইটার কঁচা পেয়ারা চিবানো পৰ্যন্ত তার কাছে রোমাঞ্চকর ঠেকে। বুধবার সকালে পরিষ্কার রোদ উঠে দুপুরে মেঘলা করে, বিকালে আবার আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল। মাধ্যাহ্নে সদয় ডাক্তারের নাতির মুখেভাতে কেশব চক্রবর্তীর বাড়ীশুদ্ধ সকলের নিমন্ত্রণ ছিল। কুঞ্জ শনাইওলা তার সঙ্গী আর ছেলে নিয়ে আশেপাশের কয়েকটা গ্রামের বিয়ে পৈতে মুখভাতে চিরকাল শানাই বাজিয়ে এসেছে। তার অবর্তমানে সদয়কে শানাইওয়ালা আনতে হয়েছে সদর হতে । সপরিবারে নিমন্ত্রণ রেখে কোনমতে বাড়ী এসে কেশব সপরিবারে মাদুরের বিছানায় এলিয়ে পড়ল। পেট ভরে খেলে যে মানুষের এরকম দম আটকে মরণদশা হয় এটা তারা জীবনে আজ টের পেল প্ৰথম । সন্ধ্যা পৰ্যন্ত তারা এমনিভাবে অৰ্দ্ধচেতন অবস্থায় পড়ে রইল, যেন জ্ঞানহারা মাতালেরা ঘুমাচ্ছে। 'পথে একবার এবং বাড়ীতে কয়েকবার বমি করায় শৈলর ঘুমটাই কেবল হল অনেকটা স্বাভাবিক। কেশবের পেটে যন্ত্রণা আরম্ভ হওয়ায় সে-ই কাছে বসে তার পেটে খালি হাত মালিশ করে দিতে লাগল। বাড়ীতে তেল ছিল না । পেটের ব্যথা কমতে রাত হয়ে গেল, কেশবের তখন মানসিক সংস্কারগুলি ব্যাথায় টনটন কয়ছে। কালাচাদি এল অনেক পরে, রাত্রি তখন গভীর। পাড়ার খানিক তফাতে নির্জনে গাড়ী রেখে সে একজন লোক সঙ্গে করে এসেছে। শুধু এ পাড়া নয়, সমস্ত গ্রাম ঘুমে নিঝুম । কেবল কেশবের মনে হচ্ছিল অনেক দূরে