পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ কাল পরশুর গল্প 3 ot পর অচেনা বাপের সংগে রাতদুপুরে বাড়ী ছেড়ে চলে যাওয়ার কোন মানে হয় ? আমরা নয় জানি ও লোকটা মেয়েটার বাপ। কিন্তু মেয়েটাও কি তা জানে ? আমি তো ভাবছিলাম মেয়েটা যাতে বাড়ীতেই থাকে তার জন্য প্লট এত ঘোরালো করা হচ্ছে ।” মৃন্ময়ী আহত হয়ে বলে, “ও, তুমি কঁাদে নি ? হাসি চাপিছিলে!” দেহমানে স্বাস্থ্য, জীবনে আনন্দ, অসঙ্গতির হাস্যকর দিকটাই চোখে পড়ে আগে । তাই, জীবনের সংগে ছবিগুলির সংযোগের অভাব দেখে, কষ্টকল্পনা দেখে, সস্তা ও হাল্কা রোমান্সের গোঁজলা রস থই থই করতে দেখে, এমন কি মানুষের মনে ছবিগুলির প্রভাব যে কিছু কিছু ক্ষতিকর তা ভেবেও, পুলকেশরাও বিদ্বেষমূলক সমালোচনার ঝাঝি অনুভব করে না । এই সব ছবি দেখার জন্য যারা পাগল তাদের প্রতি অবজ্ঞার ভাবও পোষণ করে না । কেবল এই ভেবে আশ্চৰ্য হয়ে যায়। যে ছেলেভুলানো এ জিনিষ দিয়ে বয়স্ক মানুষ নিজেকে ভোলায় কী করে । নিজেদের ভোলাবার এত জিনিষ রয়েছে জগতে । এরকম আশ্চর্য হওয়ার মধ্যে নিজেদের বেশ বস্তুতান্ত্রিক ভাবপ্রবণতাহীন মনে হয় বলে খুব তারা গর্ব অনুভব করে । তারপর জীবন আসে। পরবতী বাস্তব অধ্যায়ের নিয়ম, অনিয়ম, প্ৰয়োজন আর ঘাতপ্ৰতিঘাতের সূচনা নিয়ে। যে ভাবে আরম্ভ করবে ভেবেছিল, পুলকেশ বা যতীন কারো আরম্ভটাই সেরকম হয় না। হাসিমুখেই তারা সেই আরম্ভকে গ্ৰহণ করে এবং প্রয়োজন হওয়ার বৈচিত্র্যময় প্রেমের লীলাখেলায় কত সময় যে তার কোথা দিয়ে কেটে যায় ! শেষের তিন বছর একবারও পুলকেশ কোন সিনেমায় যায়নি। এই নিয়েই একদিন মুগায়ীর সঙ্গে তার দারুণ কলহ হয়ে গেল। সিনেমায় মৃণায়ী হরদম যায়, অন্যের সঙ্গে । কিন্তু কেন তা হবে ? কেন তাকে পুলকেশ একদিন সিনেমায় নিয়ে যেতে পারবে না ? কোন স্বামী এ রকম ব্যবহার করে স্ত্রীর সঙ্গে ? তার নিজের যেতে ভাল না লাগুক, মৃন্ময়ীর কি সখি থাকতে নেই। “আরেকদিন নিয়ে যাব ।” “আরেকদিন কেন ? আজি নিয়ে চল।” 疇 তাই করতে হল। শেষ পর্যন্ত । বহুদিন পরে পুলকেশ সেদিন একটি বাংলা ছবি দেখল। খাপছাড়া অদ্ভুত মনে হল বটে ছবিটা, কিন্তু আজ আর হাস্যকর মনে হল না। এমন কি অজানা নতুন তরুণ ডাক্তার পাড়াগাঁয়ে পা দেওয়া মাত্র কম্পাউণ্ডারের বয়স্থ কুমারী মেয়েকে তার সঙ্গে মাঠে গিয়ে নৃত্যচ্ছন্দে লাফাতে